লাউ চাষ পদ্ধতি ও লাউয়ের উন্নত জাত
যেভাবে লাউ চাষ করবেন
লাউ প্রায় সব ধরনের মাটিতে জন্মে। তবে প্রধানত দোআঁশ থেকে এটেঁল দোআঁশ মাটি লাউ চাষের জন্য উত্তম।
লাউ সাধারণত দিবস নিরপেক্ষ লতানো উদ্ভিদ, ফলে বছরের অধিকাংশ সময় চারা লাগিয়ে ফসল উৎপাদন করা যায়।
বীজ বপন ও চারা উৎপাদন
লাউ চায়ের জন্য পলিথিন ব্যাগে চারা তৈরি করা উত্তম। এতে বীজের খরচ কম পড়ে। পলিথিন ব্যাগে চারা উৎপাদন করে রোপণ করলে হেক্টরপ্রতি ৮০০-১০০০ গ্রাম বীজের প্রয়োজন হয়। মাদা প্রতি ২টি বীজই যথেষ্ট।
বীজ বপনের সময়
শীতকালীন চাষের জন্য মধ্য-ভাদ্র থেকে মধ্য-কার্তিক (আগস্ট-নভেম্বর) মাসে বীজ বপন করা যেতে পারে। তবে এবার শীতকালীন ফসলের জন্য ভাদ্রের ১ম সপ্তাহে বীজ বুনতে হবে। গ্রীষ্মকাল ফেব্রুয়ারি থেকে মে। তবে সারা বছরই লাউ চাষ করা যায়।
জমি তৈরি
আমাদের দেশে গ্রাম-গঞ্জে প্রধানত বসতবাড়ির আশে-পাশে যেমন-গোয়াল ঘরের কিনারায় বা পুকুর পাড়ে ২-৩টি লাউ গাছ লাগানো হয়ে থাকে। তবে বর্তমানে বানিজ্যিক ভাবে লাউ চাষ হচ্ছে। বানিজ্যিক ভাবে লাউ চাষ করার জমি ভালো করে চাষ দিয়ে নিতে হবে। লাউয়ের জমিতে ৪টি চাষ দেওয়া উত্তম। ২ মিটার × ২ মিটার দূরত্বে মাদা তৈরি করতে হবে। প্রতি মাদায় গোবর, টিএসপি, এমওপি, হিউমিক এসিড, রুট হরমোন ইত্যাদি পরিমাণ মতো দিয়ে জমি প্রস্তুত করতে হবে। উল্লেখ্য জমি চাষের সময় টিএসপি, এমওপি দিয়ে চাষ দেওয়া উত্তম।
লাউয়ের উন্নত জাত
বাংলাদেশে লাউয়ের দেশি ও হাইব্রিড দুই জাতের জাতের লাউ চাষ করা হয়। পূর্বে দেশি লাউ অধিক জনপ্রিয় থাকলেও ধীরে ধীরে তা কমে যাচ্ছে। উচ্চফলনশীল হাইব্রিড জাত লাউ চাষে ঝুকছে কৃষক। হাইব্রিড লাউয়ের প্রায় সব জাত সারাবছর চাষ করা যায়। রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি ও অধিক ফলন পাওয়া যায়। নিচে কিছু উচ্চফলনশীল লাউয়ের জাত সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:-
লাউয়ের উন্নত জাত | ||||
---|---|---|---|---|
জাতের নাম | ফসল সংগ্রহ | ফলের ওজন | রোপণের সময় | বিশেষ বৈশিষ্ট্য |
হাইব্রিড লাউ নবাব | ৫০-৫৫ দিন | ২.০-২.৫ কেজি | বারোমাসি |
|
হাইব্রিড লাউ নাইস গ্রীন | ৪০-৪৫ দিন | ২- ২.৫ কেজি | বারোমাসি |
|
হাইব্রিড লাউ সুলতান | ৫০-৫৫ দিন | ২-২.৫ কেজি | বারোমাসি |
|
হাইব্রিড লাউ ডায়ানা | ৫০-৫৫ দিন | ২- ২.৫ কেজি | বারোমাসি |
|
হাইব্রিড লাউ মার্শাল | ৫০-৫৫ দিন | ২- ২.৫ কেজি | বারোমাসি |
|
হাইব্রিড লাউ ময়না | ৫০-৫৫ দিন | ১.৫-২ কেজি | বারোমাসি |
|
চারা রোপণ
লাউ চাষের জন্য ২x২ মি. দূরত্বে প্রতি মাদায় ৪-৫টি বীজ বোনা উচিত। রবি মৌসুমে লাউ মাচাঁ বিহনী অবস্থায় ও চাষ করা যায়। তবে মাচায় ফলন বেশি হয়। এছাড়া পানিতে ভাসমান কচুরিপানার স্থুপে মাটি দিয়ে বীজ বুনেও সেখানে লাউ জন্মানো যেতে পারে।
ফসল সংগ্রহ
লাউ সাধারণত রোপণের ৪০ থেকে ৯০ দিনে সংগ্রহ করা যায়। তবে জাত ও পরিচর্যা উপর ভিত্তি করে ফলন আগে ও পরে আসে।
অন্তর্বর্তীকালীন পরিচর্যা
নিয়মিত গাছের গোড়ায় পানি সেচ দেওয়া, মাটির চটা ভাঙ্গা, বাউনী দেওয়া ও অন্যান্য পরিচর্যা করা বাঞ্ছনীয়। মাচা শক্ত করে বাঁধতে হবে।