আধুনিক পদ্ধতিতে মুলা চাষ
মুলা চাষ পদ্ধতি ও পুষ্টিগুণ
মুলা ব্রাসিকেসি পরিবারের অন্তর্ভুক্ত একটি পুষ্টিকর সবজি। যা কাচা সালাত হিসেবেই বেশি ব্যবহার করা হয়। তবে শাক ও তরকারি হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। মুলাতে প্রচুর পরিমাণে ক্যারোটিন তথা ভিটামিন এ, ক্যালসিয়াম ও লৌহ রয়েছে। এ দেশে মুলার আবাদ দিন দিন বাড়ছে।
বিশেষ করে অমৌসুমে মুলা আবাদের দিকে চাষিরা ঝুঁকে পড়েছেন। মুলা সহচর ফসল চাষ করে কীটপতঙ্গ ও রোগ প্রতিরোধ করা যায়।
মুলার পুষ্টি উপাদান [প্রতি ১০০ গ্রাম ভক্ষণযোগ্য অংশে] |
|
---|---|
উপাদান | পরিমাণ |
শক্তি | ৬৬ কিলোজুল |
শর্করা | ৩.৪ গ্রাম |
চিনি | ১.৮৬ গ্রাম |
খাদ্য আশঁ | ১.৬ গ্রাম |
স্নেহ পদার্থ | ০.১ গ্রাম |
প্রোটিন | ০.৬৮ গ্রাম |
থায়ামিন(বি১) | ০.০১২ মিগ্রা |
রিবোফ্লাভিন(বি২) | ০.০৩৯ মিগ্রা |
নিয়াসিন(বি৩) | ০.২৫৬ মিগ্রা |
প্যানটোথেনিক অ্যাসিড(বি৫) | ০.১৬৫ মিগ্রা |
ভিটামিন বি৬ | ০.৭১ মিগ্রা |
ফোলেট(বি৯) | ২৫ μg |
ভিটামিন সি | ১৪.৮ মিগ্রা |
ক্যালসিয়াম | ২৫ মিগ্রা |
লৌহ | ০.৩৪ মিগ্রা |
ম্যাগনেসিয়াম | ১০ মিগ্রা |
ম্যাঙ্গানিজ | ০.০৬৯ মিগ্রা |
ফসফরাস | ২০ মিগ্রা |
পটাশিয়াম | ২৩৩ মিগ্রা |
জিংক | ০.২৮ মিগ্রা |
জমি ও মাটি
উঁচু, মাঝারি উঁচু ও মাঝারি নীচু জমিতে মুলা চাষ করা যায়। সুনিষ্কাশিত বেলে দোয়াশ মাটি মুলা চাষের জন্য ভাল। এঁটেল মাটিতে মুলার বাড় বাড়তি কম হয়। মূশলা চাষের জন্য জমি গভীরভাবে ধুলো ধুলো করে চাষ করতে হয়। ছাই ও জৈব সার বেশী ব্যবহারে মুলার বাড় বাড়তি ভাল হয়
জাত
একসময় জাপানের বিখ্যাত তাসাকি সান জাতের মুলার মাধ্যমে এ দেশে উচ্চফলনশীল মুলার আবাদ শুরু হলেও এখন মুলার প্রায় ২৫টি অধিক জাত চাষ হচ্ছে। আসছে নিত্য নতুন স্বল্প জীবনকালের অধিক ফলনশীল হাইব্রিড জাত। উল্লেখযোগ্য জাত সমূহ হল বারি মুলা ১, বারি মুলা ২, বারি মুলা ৩, এভারেস্ট, হোয়াইট প্রিন্স, বিপ্লব ৯৪, হিমালয় এফ১, সুপার ৪০, মুক্তি এফ১, তাসাকী, কুইক ৪০, রকি ৪৫, হোয়াইট রকেট, হোয়াইট ৪০, জি চেটকি, সুফলা ৪০, বিএসবিডি ২১০১ এফ১, আনারকলি, দুর্বার, রকেট এফ১, সামার বেষ্ট এফ১, হ্যাভেন এফ১, মিনো আর্লি লং হোয়াই, বরকতি ৪০ এফ১, পাইলট এফ১, সিগমা ৪০ ইত্যাদি। নিচে মুলার বিভিন্ন জাতের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি দেয়া হল-
মুলার উন্নত জাত | ||||
---|---|---|---|---|
জাতের নাম | রোপণ | সংগ্রহ | বৈশিষ্ট্য | ফলন |
বারিমুলা ১ (তাসাকিসান) | ভাদ্র থেকে কার্তিক | ৪০-৪৫ দিন |
|
প্রতি হেক্টরে ফলন ৬৫-৭০ টন |
বারিমুলা ২ (পিংকী) | ভাদ্র থেকে কার্তিক | ৪০-৪৫ দিন |
|
প্রতি হেক্টরে ফলন ৬৫-৭০ টন |
বারি মুলা ৩ (দ্রুতি) | ভাদ্র থেকে কার্তিক | ৪০-৪৫ দিন |
|
প্রতি হেক্টরে ফলন ৪০-৪৫ টন |
এভারেষ্ট এফ১ | বারোমাসি | ৪০-৪৫ দিন |
|
প্রতি হেক্টরে ফলন ৫০-৬০ টন |
হোয়াইট প্রিন্স এফ১ | মধ্য শ্রাবণ থেকে ভাদ্র | ৪০-৪৫ দিন | প্রতি হেক্টরে ফলন ৫০-৬০ টন | |
মিনো আর্লি লং হোয়াইট | আশ্বিন থেকে অগ্রহায়ণ | ৪০-৪৫ দিন |
|
প্রতি হেক্টরে ফলন ৪০-৫০ টন |
বীজ হার ও বপন
আশ্বিন থেকে কার্তিক মাসের মধ্যেই অধিকাংশ মুলার বীজ বপন করা হয়। প্রতি হেক্টরে বপনের জন্য ২.৫-৩.০ কেজি বীজের প্রয়োজন হয়। সাধারণত ছিটিয়ে বীজ বপন করা হয়। তবে সারিতে বপন করলে পরিচর্যার সুবিধে হয়। সারিতে বুনতে হলে এক সারি থেকে আর এক সারির দূরত্ব দিতে হবে ২৫-৩০ সেমি.।
সারের মাত্রা
সারের নাম | প্রতি শতকে | প্রতি হেক্টরে |
---|---|---|
ইউরিয়া | ১.২-১.৪ কেজি | ৩০০-৩৫০ কেজি))) |
টিএসপি | ১-১.২ কেজি | ২৫০-৩০০ কেজি |
এমওপি | ০.৮৫-১.৪ কেজি | ২১৫-৩০০ কেজি |
গোবর | ৩২-৪০ কেজি | ৮-১০ টন |
সার প্রয়োগ পদ্ধতি
জমি তৈরির সময় সবটুকু জৈব সার, টিএসপি ও অর্ধেক এমওপি সার মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। ইউরিয়া ও বাকি অর্ধেক এমওপি সার সমান ২ কিস্তিতে ভাগে ভাগ করে বীজ বপনের পর তৃতীয় ও পঞ্চম সপ্তাহে ছিটিয়ে সেচ দিতে হবে। মুলার বীজ উৎপাদন করতে হলে জমিতে অবশ্যই বোরন সার হিসেবে বোরিক পাউডার/বোরক্স ব্যবহার করতে হবে। প্রতি হেক্টরে ১০-১৫ কেজি বোরিক অ্যাসিড/বোরাক্স দিলেই চলে।
পরিচর্যা
বীজ বপনের ৭-১০ দিন পর অতিরিক্ত চারা তুলে পাতলা করে দিতে হবে। ৩০ সেমি. দূরত্বে একটি করে চারা রাখা ভাল। মাটিতে রস কম থাকলে সেচ দিতে হবে। প্রতি কিসি-র সার উপরি প্রয়োগের পর পরই সেচ দিতে হবে। আগাছা পরিষ্কার করে দিতে হবে। মাটি শক্ত হয়ে গেলে নিড়ানি দিয়ে মাটির উপরের চটা ভেঙ্গে দিতে হবে।
পোকামাকড় ব্যবস্থাপনা
অনেক সময় মুলা পাতার বিট্ল বা ফ্লি বিট্ল পাতা ছোট ছোট ছিদ্র করে খেয়ে ক্ষতি করে। এ ছাড়া করাত মাছি বা মাস্টার্ড স’ ফ্লাই, বিছা পোকা ও ঘোড়া পোকা পাতা খায়। বীজ উৎপাদনের সময় ক্ষতি করে জাব পোকা।
রোগ ব্যবস্থাপনা
মুলা পাতায় অল্টারনারিয়া পাতায় দাগ একটি সাধারণ সমস্যা। এছাড়া হোয়াইট স্পট বা সাদা দাগ রোগও দেখা যায়।
ফসল সংগ্রহ ও ফলন
মুলা শক্ত হয়ে আঁশ হওয়ার আগেই তুলতে হবে। অবশ্য এখন হাইব্রিড জাতসমূহ আসাতে এ সম্ভাবনা অনেক কমে গেছে। তবুও কচি থাকতেই মুলা তুলে ফেলতে হবে। এতে বাজার দাম ভাল পাওয়া যায় এবং স্বাদও ভাল থাকে। জাতভেদে হেক্টও প্রতি ফলন হয় ৪০-৬০ টন।