ধানের ব্লাস্ট রোগ প্রতিরোধ প্রতিকার ও দমন
ব্লাস্ট ধানের একটি ছত্রাকজনিত রোগ। পাইরিকুলারিয়া ওরাইজি নামক একধরণের ছত্রাকের আক্রমণে এ রোগ হয়ে থাকে। প্রতি লিটার পানিতে (টেবুকোনাজল ৫০% + ট্রাই...
ধানের ব্লাস্ট রোগ কি?
ব্লাস্ট ধানের একটি ছত্রাকজনিত রোগ। পাইরিকুলারিয়া ওরাইজি (pyricularia oryzae) নামক একধরণের ছত্রাকের আক্রমণে এ রোগ হয়ে থাকে।

বাংলাদেশে এটি বর্তমানে ধানের অন্যতম প্রধান রোগ। এ রোগটি বোরো ও আমন মৌসুমে বেশী হয় এবং চারা অবস্থা থেকে ধান পাকার আগ পর্যন্ত যে কোন সময় এ রোগ দেখা যায়। অনুকূল অবস্থায় রোগটি দ্রুত বিস্তার লাভ করে এবং ব্যাপক ক্ষতি করে থাকে। রোগপ্রবণ জাতে রোগ সংক্রমণ হলে শতকরা ৮০ ভাগ ক্ষতি হয়ে থাকে।
ব্লাস্ট কত প্রকার ও কী কী?
ব্লাস্ট রোগ প্রধানত ০৩ প্রকার
- পাতা ব্লাস্ট বা Leaf Blast
- গীট ব্লাস্ট বা Node Blast
- শিষ ব্লাস্ট বা Neck Blast
ব্লাস্ট রোগের লক্ষণ
পাতা, কাণ্ড ও শিষ আক্রান্ত হয়। প্রথমে পাতায় ডিম্বাকৃতির দাগ পড়ে যার দু প্রান্ত লম্বা হয়ে চোখাকৃতি ধারণ করে। দাগের মধ্যভাগ ছাই রঙের ও বাইরের দিকের প্রান্ত গাঢ় বাদামি হয়। অনেকগুলি দাগ একত্রিত হলে পাতাটি মরে যেতে পারে। রাতে ঠান্ডা, দিনে গরম এবং শিশির থাকলে এ রোগের প্রকোপ বেড়ে যায়।
পাতা ব্লাস্ট বা Leaf Blast এর লক্ষণ
- পাতায় ছোট ছোট ডিম্বাকৃতির সাদা বা বাদামি দাগ দেখা দেয়।
- পর্যায়ক্রমে সমস্ত পাতা ও ক্ষেতে ছড়িয়ে পড়ে।
- আক্রমণ বেশি হলে ক্ষেতের বিভিন্ন স্থানে রোদে পুড়ে যাওয়ার মতো দেখা যায়।
- আক্রান্ত ক্ষেতে অনেক সময় পাতা ও খোলের সংযোগস্থলে কালো দাগ দেখা দেয় যা পরবর্তীতে পচে পাতা ভেঙে পড়ে ফলন বিনষ্ট হয়।
গীট ব্লাস্ট বা Node Blast এর লক্ষণ
- ধানের থোড় বা গর্ভবতী অবস্থায় এ রোগ হলে গীটে কালো দাগের সৃষ্টি হয়।
- গিঁট আক্রান্ত হলে আক্রান্ত স্থান কালো ও দুর্বল হয়। জোরে বাতাসের ফলে আক্রান্ত স্থান ভেঙে পড়ে কিন্তু একদম আলাদা হয় না, ফলে আক্রান্ত গিটের উপরের অংশ মারা যায়।
শিষ ব্লাস্ট বা Neck Blast এর লক্ষণ
- শিষ অবস্থায় এ রোগ হলে শিষের গোড়া কালো বা বাদামি হয়ে যায়।
- আক্রমণ বেশি হলে শিষের গোড়া ভেঙ্গে যায়।
- ধান পুষ্ট হওয়ার পূর্বে রোগের আক্রমণের ফলে শিষের সব ধান চিটা হয়ে যায়।
ব্লাস্ট রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা
- প্রথমত এ রোগ প্রতিরোধী জাত চাষ করা।
- আক্রান্ত ক্ষেতের খড়কুটো আগুনে পুড়িয়ে মাটিতে মিশিয়ে দেয়া।
- সুষম মাত্রায় সার প্রয়োগের মাধ্যমে ব্লাস্ট রোগ প্রতিরোধ করা যায়।
- রোগের আক্রমণ হলে ইউরিয়া সারের উপরি প্রয়োগ বন্ধ করতে হবে।
- বিঘা প্রতি ৫-৭ কেজি এমওপি সার উপরি প্রয়োগ করতে হবে অথবা ৫ গ্রাম/ লিটার স্প্রে করা যেতে পারে।
- ক্ষেতে পানি সংরক্ষণ করতে হবে।
ব্লাস্ট রোগ দমন ব্যবস্থা বা প্রতিকার
- জমিতে সব সময় পানি ধরে রাখা।
- কুশি অবস্থায় রোগটি দেখা দিলে বিঘা প্রতি ৫ কেজি পটাশ সার উপরি প্রয়োগ করে সেচ দেওয়া।
- প্রতি লিটার পানিতে (টেবুকোনাজল ৫০% + ট্রাইফ্লুক্সিট্রোবিন ২৫%) জাতীয় ছত্রাকনাশক যেমন: নাটিভো ৭৫ ডব্লিউপি ০.৬০ গ্রাম মিশিয়ে বিকেলে স্প্রে করা।
অথবা প্রতি লিটার পানিতে ট্রাইসাইক্লাজল গ্রুপের ছত্রাকনাশক যেমন: ট্রপার ৭৫ ডব্লিউপি বা জিল ৭৫ ডব্লিউপি ০.৮১ গ্রাম বা অন্যান্য নামের এ রোগের জন্য অনুমোদিত ছত্রাকনাশক অনুমোদিত মাত্রায় মিশিয়ে বিকেলে স্প্রে করা।
পরবর্তীতে যা যা করবেন না
- আক্রান্ত ক্ষেত থেকে বীজ সংগ্রহ করবেন না।
পরবর্তীতে যা যা করবেন
- ধান কাটার পর শুকিয়ে নিয়ে নাড়া জমিতেই পুড়িয়ে ফেলুন।
- মাটি পরীক্ষা করে জমিতে সুষম সার প্রয়োগ করুন
- মাটিতে জৈব সার প্রয়োগ করুন
- এ রোগের আশঙ্কা থাকলে জমিতে পটাশ সার দুইবারে প্রয়োগ করুন (জমি তৈরির সময় অর্ধেক ও চারা লাগানোর ৩০ দিন ইউরিয়া উপরি প্রয়োগের সময় অর্ধেক।