এসিটামিপ্রিড পরিচিতি
এসিটামিপ্রিড মূলত "ক্লোরোপাইরিডিনাইল নিয়োনিকোটিনয়েড" শ্রেণীর একটি গন্ধহীন কীটনাশক। এটি শোষক পোকা দ্রুত দমন করে গাছকে সুস্থ-স্ববল ও নীরোগ রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
 |
এসিটামিপ্রিড কীটনাশক |
এসিটামিপ্রিড কীভাবে কাজ করে
এসিটামিপ্রিড এর কয়েকটি গুন আছে। এটি বিভিন্ন ভাবে কাজ করে থাকে। যেমন :
প্রবহমান
ইমিডাক্লোপ্রিডের মতো একটিও Systemic বা অন্তর্বাহী ক্রিয়া সম্পন্ন কীটনাশক তাই স্প্রে করার অল্প সময়ের মধ্যেই ইহা গাছের ভিতরে প্রবেশ করে সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে এবং গাছের রসের সাথে মিশে সম্পূর্ণ গাছটি বিষাক্ত করে তোলে।
স্পর্শক
স্পর্শ ক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ায় কীট-পতঙ্গের শরীরে সরাসরি স্পর্শ করলে বিষক্রিয়া ঘটে।
পাকস্থলীয়
ইহা পাকস্থলীয় ক্রিয়া সম্পন্ন কীটনাশক। তাই স্প্রে করার পরে পাতা, ডগা ইত্যাদি থেকে রস খেলে পোকার শরীরে বিষক্রিয়া ঘটে৷
ট্রান্সলেমিনার
এসিটামিপ্রিড এর চমৎকার ট্রান্সলেমিনার গুণের কারণে এপিডার্মিস স্তর ভেদ করে পাতার নিচে চলে আসে এবং আড়ালে লুকিয়ে থাকা পোকাগুলো রস খাওয়ার সাথে সাথে বিষক্রিয়া শুরু হয়ে যায়।
এসিটামিপ্রিড কার্যকারিতা দীর্ঘ দিন স্থায়ী থাকে৷
এসিটামিপ্রিড কোন কোন পোকা দমন করে?
এসিটামিপ্রিড যে সকল পোকা দমন করে, তার অল্প কয়টি সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
এফিড (Aphid)
সকল ধরনের চোষক পোকা যেগুলো গাছের পাতা, ফুল-ফল ও নরম ডালপালা থেকে রস চুষে খায়। এদের দমনে এটি খুব ভাল কাজ করে। যেমন :
সাদা মাছি
বেগুন, শিম, কুমড়া, শসা, পেঁপে সহ প্রায় সকল ধরনের সবজি ও ফসলে সাদা মাছি বিপজ্জনক একটা বালাই, যেটি সহজে যেতে চায় না। পাতার নিচে লুকিয়ে থাকায় অধিকাংশ কীটনাশকে কোনো প্রভাব ফেলে না। সাদা মাছি নিয়ন্ত্রণে এসিটামিপ্রিড খুব কার্যকরী একটি সমাধান।
থ্রিপস পোকা
উকুনের থেকেও অতি ক্ষুদ্র পোকা, পেঁয়াজ, বেগুন, শসা, শিম, কুমড়া সহ সকল ধরনের সবজি, মাঠ ফসলে আক্রমণ করে। খরা আবহাওয়ায় এর প্রকোপ বেশি হয়। এটি দমনেও এসিটামিপ্রিড খুব কার্যকরী।
জ্যাসিড
জ্যাসিড বা শ্যামা পোকা নামে পরিচিত। ঢেড়স, বেগুন ইত্যাদি গাছে বেশি দেখা যায়।
এছাড়াও জাব পোকা, মিলিবাগ, বাদামি ঘাস ফড়িং, হপার সহ সকল শোষক পোকা দমন করে।
এটি লার্ভিসাইড হিসেবেও মশা-মাছি ও শোষক পোকার লার্ভা ও ডিম নষ্ট করে।
মাছি দমন
গরু-ছাগলের ঘরে মাছির উপদ্রব বেড়ে যাওয়ায় একটা এক্সপেরিমেন্ট করেছিলাম। ১০০ গ্রাম চিনির সাথে ৩ গ্রাম সালভো/চন্দ্রা মিক্স করে সেটি সরাসরি মাছির আবাসস্থলের কাছে রেখে দেয়া অথবা ৩ গ্রাম বিষ মিশ্রিত চিনি ৫০ গ্রাম গরম ভাতের সাথে সামান্য পানি দিয়ে মিশিয়ে মাছির আবাসস্থলে রেখেছিলাম। অনেকগুলো কীটনাশক পরীক্ষা করে এটির রেজাল্ট সবচেয়ে চমৎকার পেয়েছি। আপনারাও খুব সহজেই পরীক্ষাটি করতে পারেন। খুব কম খরচে অসাধারণ রেজাল্ট পাবেন৷
এসিটামিপ্রিড ব্যবহারবিধি
সাধারণত সবজির ক্ষেত্রে ১০ লিটার পানিতে ৫ গ্রাম হারে মিশিয়ে স্প্রে করতে হয়। তবে আক্রমণের মাত্রা বেশি হলে গাছের ভিন্নতায় লিটারে ১ গ্রাম পর্যন্ত দেয়া হয়ে থাকে৷ এটি পানিতে সহজে গুলতে চায় না। তাই এটি পানিতে একটু বেশি সময় ধরে রাখতে হবে, ভালোভাবে ঘুলিয়ে লিতে হবে৷ ঠান্ডা পানিতে এটি একটু তাড়াতাড়ি গুলে যায়। তাই সম্ভব হলে আগে ঠান্ডা পানিতে গুলিয়ে পরে সেটা ব্যবহার করতে হবে।
ক্রস প্রতিক্রিয়া
এসিটামিপ্রিড সকল ধরনের নিওনিকোটিনয়েড শ্রেণীর কীটনাশক, যেমন : ইমিডাক্লোপ্রিড, থায়ামেথোক্সাম, নিতেনপাইরাম, থিয়াক্লোপ্রিড ইত্যাদির সাথে ব্যবহার করা যাবে না। যেহেতু এগুলো একই শ্রেণির কীটনাশক।
অন্যান্য সাধারণ কীটনাশকের সাথে যেমন : অর্গানোফসফেট (ডায়মেথয়েট, ক্লোরোপাইরিফস ইত্যাদি), পাইরিথ্রয়েড (সাইপারমেথ্রিন, ল্যাম্বডা সাইহ্যালনাথ্রিন, ফেনভেলারেট ইত্যাদি), কার্বামেট (কার্বোসালফান, কারটাপ ইত্যাদি) কীটনাশকের সাথে মিক্স করে স্প্রে করলে সমস্যা হবে না।
বিষাক্ততা
এসিটামিপ্রিড পোকামাকড়ের জন্য অত্যন্ত বিষাক্ত, পাখিদের জন্যও খুব বিষাক্ত। তবে মানুষ ও স্তন্যপায়ী প্রাণীর জন্য কম বিষাক্ত। মৌমাছির জন্যও বিষাক্ত, তবে ইমিডাক্লোপ্রিড সহ অন্যান্য নিওনিকোটিনয়েড কীটনাশক থেকে এর বিষাক্ততা অনেক কম। পরিবেশের জন্য এটি কম ঝুঁকিপূর্ণ।
এসিটামিপ্রিড গ্রুপের কীটনাশকের বানিজ্যিক নাম
কৃষিক্ষেত্রে ২০ এসপি ফরমুলেশনে এটি ব্যপক ব্যবহৃত হয়। বিভিন্ন কোম্পানি থেকে এটি বিভিন্ন নামে বাজারজাত করে। নিচে কিছু উল্লেখ করা হলো :