কার্বোফুরান কীটনাশক পরিচিতি

কার্বোফুরান কীটনাশক

কার্বোফুরান মূলত একটি কার্বামেট কীটনাশক , যা আলু , ভুট্টা এবং সয়াবিন সহ বিভিন্ন ধরনের ক্ষেতের ফসলের পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণ করতে সারা বিশ্বে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয় । এটি একটি পদ্ধতিগত কীটনাশক , যার অর্থ হল উদ্ভিদ এটিকে শিকড়ের মাধ্যমে শোষণ করে এবং সেখান থেকে উদ্ভিদ এটিকে তার অঙ্গগুলিতে বিতরণ করে যেখানে কীটনাশক ঘনত্ব অর্জিত হয়। কার্বোফুরানের কীটপতঙ্গের বিরুদ্ধে যোগাযোগের কার্যকলাপও রয়েছে। এটি এখনও ব্যবহৃত সবচেয়ে বিষাক্ত কীটনাশকগুলির মধ্যে একটি।

কার্বোফুরান কীটনাশক পরিচিতি

অনেক সময় জমিতে বা ছাদ বাগানে পিঁপড়া, শামুক, কেচো, কেন্নো, নেমাটোডসহ বিভিন্ন ধরনের পোকার আক্রমণ দেখা যায়। এগুলো শুধু মাটিতেই থাকে না, গাছের বিভিন্ন ধরনের ক্ষতি করে থাকে। আজকে এমন একটা কীটনাশক নিয়ে আলোচনা করব যেটা মাটিতে প্রয়োগের ফলে আর কোনো পোকামাকড় এর আক্রমণ হবে না।


কার্বোফুরান কী?

কার্বোফুরান একটি দানাদার কীটনাশক। এটি প্রতিরোধক এবং প্রতিষেধক হিসাবে কাজ করে। অর্থাৎ পোকা লাগার আগে কার্বোফুরান ব্যবহার করলে পোকা লাগবেনা এবং পোকা লাগার পর ব্যবহার করলে পোকা মারা যাবে। এটি দানাদার হওয়ায় এটি ইউরিয়া সারের সাথে মিশিয়ে ছিটিয়ে দেওয়া যায় এবং এতে বাড়তি শ্রমিক লাগে না।


কোনো ফসলে এটা ব্যবহার করা যায়?

আখ, ধান এবং সয়াবিনে সব থেকে বেশি ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও গম,টমেটো, কলা, আম, লিচু, ঢেড়স ইত্যাদি  ফসলে ব্যবহার করা হয়। 


কোন কোন পোকামাকড় দমন করে?

ধানের মাজরা পোকা, বাদামি গাছ ফড়িং,এফিড, জেসিড, ফল ও কান্ডছিদ্রকারী পোকা, আখের মাজরা পোকা, নেমাটোড, কেন্না, কেচো, উইপোকা, শুঁয়োপোকা, হোয়াইট গ্রাব, শামুক,পিঁপড়া ইত্যাদি।


ব্যবহারের নিয়ম

সাধারণত জমি প্রস্তুতির সময় কার্বোফুরান ব্যবহার করতে হয়। 

  • ১০-১২" টবের জন্য ৩-৫ গ্রাম কার্বোফুরান ব্যবহার করতে হবে।
  • হাফ ড্রামের জন্য ১০ গ্রাম কার্বোফুরান ব্যবহার করতে হবে।

এছাড়াও বিভিন্ন রোগের ক্ষেত্রে বিভিন্ন মাত্রায় কার্বোফুরান ব্যবহার করতে পরামর্শ দেওয়া হয়।

  • যেমন ধানের উফরা রোগে জমিতে ২ ইঞ্চি পানি থাকা অবস্থায় কার্বোফুরান গ্রুপের কীটনাশক বিঘাপ্রতি ২.৫ -৩ কেজি হারে ব্যবহার করতে হবে।
  • ধান ও অন্যান্য ফসলের মাজরা পোকা ও নেমাটোড জাতীয় কৃমি দমনের জন্য বিঘাপ্রতি ২.৪ কেজি হারে ব্যবহার করতে হয়।
  • আখের উইপোকা ও মাজরা পোকা দমনের জন্য বিঘাপ্রতি ৮.৮ কেজি হারে ব্যবহার করতে হয়।

বাণিজ্যিক নাম

১.কার্বোফুরান ৩ জি (এসিআই)

২.ফুরাকার্ব ৩ জি ( এসিআই)

৩.ফুরাটাফ ৫ জি (অটোক্রপ)

৪.ব্রিফার ৫ জি( এসিআই)

৫.কুরিডান ৫ জি ( ম্যাকডোনাল্ড) 

এরকম আরও অনেক নামে এই কার্বোফুরান বাজারে পাওয়া যায়।


কার্বোফুরান কীটনাশক পরিচিতি
এসিআই ক্রপ কেয়ার কোম্পানির কার্বোফুরান

কার্বোফুরান এর ক্ষতিকর দিক

কার্বোফুরান কে মানব স্বাস্থ্যের জন্য অন্তত ক্ষতিকর একটি পদার্থ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। মানুষের বিভিন্ন ধরনের রোগ দেখা দেয় এই কার্বোফুরান এর সংস্পর্শে আসার জন্য।

কার্বোফুরান পাখিদের কাছে বিশেষভাবে বিষাক্ত বলে পরিচিত। এর দানাদার আকার, একটি একক দানা একটি পাখি মেরে ফেলতে পারে। পাখিরা প্রায়শই ভুল করে বীজের বদলে কীটনাশক খেয়ে ফেলে তার কিছুক্ষণ পরে মারা যায়।

কীটনাশকের তরল সংস্করণ পাখির পক্ষে কম ঝুঁকিপূর্ণ কারণ তারা সরাসরি এটি খাওয়ার সম্ভাবনা নেই।

কার্বোফুরান এর ব্যবহার এর ফলে ক্ষতিকর পোকামাকড় ছাড়াও মাটিতে বিদ্যমান বিভিন্ন উপকারী অনুজীব ও মারা যায়। ফলে একসময় মাটির উর্বরতা শক্তি কমে যায়।


কার্বোফুরান এর residual effect অনেক বেশি। প্রয়োগের পর ৩০ দিন পর্যন্ত এর ইফেক্ট থাকে।

আমাদের একটা বিষয় মাথায় রাখা উচিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডার মতো দেশ গুলো কার্বোফুরান এর ব্যবহার নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে,,আরো অনেক দেশ  নিষিদ্ধ ঘোষণা করার কথা ভাবছে। তাই আমাদের উচিত কার্বোফুরান এর ব্যবহার কমানো। যদি একান্তই ব্যবহার করতে হয় তাহলে নিচের সতর্কতা গুলো মেনে চলা উচিত।

⚠️সতর্কতা⚠️

কার্বোফুরান যেহেতু এক ধরনের শক্তিশালী  বিষ তাই এর ব্যবহার যথাসম্ভব কম করা উচিত এবং ব্যবহার  ও সংরক্ষণের ক্ষেত্রে বাড়তি সতর্কতা প্রয়োজন।

এটা গাছ শিকড়ের মাধ্যমে শোষণ করে পুরো গাছে ছড়িয়ে দেয়। তাই শাক জাতীয় গাছে ব্যাবহার না করাই ভালো।

  • ব্যবহারের আগে অবশ্যই হ্যান্ড গ্লাভস পরে নিতে হবে এবং পড়ে হাত ভালোভাবে সাবান দিয়ে ধুতে হবে।
  • শিশুদের নাগালের বাইরে রাখতে হবে।


লেখক- মারিয়া হাসান 

©ই-কৃষি ক্লিনিক ||e-Krishi Clinic

আপনারঅদৃশ্যমন্তব্য

1 টি মন্তব্য

Cancel

অবাঞ্চিত মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকুন