প্যারাকোয়াট গ্রুপের আগাছানাশক পরিচিতি
প্যারাকোয়াট গাঢ় এবং নীল রঞ্জকযুক্ত কালচে বর্ণের লিকুইড জাতীয় নন-সিলেক্টিভ বা অনির্বাচিত আগাছানাশক। এটি সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত আগাছানাশক৷
প্যারাকোয়াট কি?
প্যারাকোয়াট অনির্বাচিত আগাছানাশক বা Non Selective Post Photosynthesis Herbicide. অর্থাৎ প্যারাকোয়াট কোন যাচাই-বাছাই না করে সকল ধরনের উদ্ভিদ মেরে ফেলার জন্য ব্যবহৃত হয়। সূর্যালোকের উপস্থিতিতে এটি কাজ করে।
প্যারাকোয়াট কীভাবে কাজ করে?
প্যারাকোয়াট একটি স্পর্শক আগাছানাশক, যা সুপারঅক্সাইড তৈরি করে গাছের কোষের পাতলা আবরণ ভেঙ্গে দিয়ে কোষের পানি বের করে দিয়ে পাতাকে শুকিয়ে গাছের সবুজ অংশ ধ্বংস করে।
প্যারাকোয়াট গ্রুপের আগাছানাশকের বানিজ্যিক নাম ও কোম্পানির নামের তালিকা
বানিজ্যিক নাম | কোম্পানি |
---|---|
প্যারাক্সন | এসিআই |
গ্রামোক্সোন | সিনজেনটা |
এরোক্সন | মিমপেক্স |
বেটাক্সন | এগ্রি সোর্স লিমিটেড |
তালাফ | ইনতেফা |
ফাস্ট অ্যাকশন | হেকেম বাংলাদেশ |
পিলারক্সন | সেমকো |
এল-কোয়াট | দি লিমিট এগ্রো |
লাকট | সুইট এগ্রোভেট লিঃ |
প্যারামেট | ভ্যালেন্ট টেক লিমিটেড |
সিস্টেম প্লাস | ব্যাবিলন |
প্রয়োগক্ষেত্র :
- পুকুর পাড়ের চারিদিকে এটি স্প্রে করা যায়। নিচের ছবিটরি ধার। সম্পূর্ণ পুকুর পাড়ের জঙ্গল পরিষ্কার করতে যেখানে ৪-৫ টি লেবার খরচ হতো প্রায় ২ হাজার টাকা, সেখানে মাত্র ৩-৪ শত টাকায় কাজটি হয়ে যাচ্ছে। এটি কেবল উপরের আগাছা নষ্ট করে, শেকড়ের ক্ষতি করে না, তাই পুকুরের মাটি ক্ষয় রোধ হয়। পাহাড়ি এলাকাতেও এটি ব্যবহারে আগাছা দমন হবে এবং মাটি ক্ষয় রোধ হবে৷
- কলা বাগান, আম গাছ সহ যে কোন বাগানে বড় বড় আগাছা হয়ে গেলে এটি প্রয়োগে খুব সহজে তা দমন করা সম্ভব হয়।
- লাউ, শিম, করলা, চিচিঙ্গা, ধুন্দল সহ যে কোন মাচার নিচের আগাছা দমন করা খুবই শ্রমসাধ্য ও ব্যয়বহুল হয়ে থাকে। এমতাবস্থায় জাস্ট মাদা পরিষ্কার করে একটু সাবধানে প্যারাকোয়াট স্প্রে করা যায়। এতে ৮০% খরচ ও শ্রম বেচে যাবে৷
- আখ, হলুদ, বেগুন ইত্যাদি খেতের লাইনের নীচ দিয়ে এটি স্প্রে করা যায়। অথবা সারি করে যে কোনো ফসল লাগানো হলে সেখানেও এটি সাবধানে প্রয়োগ করা যায়।
- পরিত্যক্ত আগাছাযুক্ত জমিতে এটি প্রয়োগ করলে খুব ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।
- পুকুরে ভাসমান ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পানা, যেগুলো পরবর্তীতে বড় হয়ে মাছ চাষে বাধা দেয়, সেগুলোকে পানিতে ভাসমান অবস্থায় প্যারাকোয়াট স্প্রে করে দমন করা যায়।
অভিজ্ঞতা
যদিও এটি অনির্বাচিত আগাছানাশক, তবে আমি প্রতি বছর বিদেশি ওল কচু চাষ করে থাকি, এটি প্রয়োগ করে দেখেছি, ওল গাছ এতে তেমন পুড়ে যায় না। বাকি অন্যান্য আগাছা সব পুড়ে যায়। এটি নিয়ে আবারো পরীক্ষা চলবে৷
ব্যবহারবিধি :
সতর্কতা :
আবাদি জমিতে ব্যবহার করলে খুব সতর্ক থাকতে হবে, গাছে যেন না পড়ে। অথবা পাশের আবাদি জমিতে ধোয়ার মতো উড়ে গেলেও ক্ষতি হবে। তাই প্রবল বাতাস চলাকালীন সময়ে স্প্রে করা যাবে না৷
স্প্রে করার পর মেশিনটি কমপক্ষে ৩ বার ধুয়ে নিতে হবে।
ক্ষতিকর প্রভাব :
পুরোনো আচুটে জমি অথবা জঙ্গলে স্প্রে করলে সাধারণত মাটিতে কেমিক্যালটি কম পৌঁছে। আগাছার লতাপাতা শুকিয়ে মাটিতে পড়তে ২-১ সপ্তাহ লেগে যায়। এ সময়ের মধ্যে এটির ক্ষতিকর প্রভাব প্রায় শেষ হয়ে যায়। তাই মাটির তেমন ক্ষতি হয় না। আবার মৃত আগাছা মাটিতে জৈব সার হিসেবে থেকে যায়।
সীমাবদ্ধতা :
আগেই বলা হয়েছে, এটি কেবল আগাছার সবুজ বা উপরের অংশ নষ্ট করে। শেকড় ক্ষতিগ্রস্ত হয় না৷ তাই শেকড় সহ আগাছা দমনের জন্য এটি প্রযোজ্য নয়।
তবে বাদাইল ঘাস ছাড়া অন্যান্য পুরোনো ঘাস, জঙ্গল পানা ইত্যাদির ক্ষেত্রে সবুজ অংশ মারা যাওয়ায় প্রায় সময় সম্পূর্ণ ঘাস গোড়া সহ মারা যেতে দেখা যায়।
যাই হোক, আমি প্রতি বছর নিয়মিত প্যারাকোয়াট আগাছানাশক ব্যবহার করে থাকি। এতে প্রচুর খরচ বেচে যায়।
গ্লাইফোসেটের মতো এটি ক্ষতিকর নয়, তাই জমির উর্বরতা নষ্ট হয় না। এটি আমার সবচেয়ে পছন্দের একটি আগাছানাশক। এখন কৃষিতে কম খরচে উৎপাদনের জন্য এটির বিকল্প হয় না৷