মরিচ চাষ পদ্ধতি
মরিচ চাষ পদ্ধতি
দেশী মরিচ ঠিক সবজি নয়। এটি মসলার মধ্যে পণ্য করা হয়। মিষ্টি মরিচ সবজি হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
এছাড়া আচার, চাটনি প্রভৃতি তৈরিতেও মরিচের ব্যবহার রয়েছে। । মরিচে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যারোটিন ও ভিটামিন-সি।
জলবায়ু ও মাটি :
পানি জমেনা এ ধরনের উঁচু দোআঁশ মাটিতেই মরিচ জন্মানো যায়। তবে মাটি অবশ্যই উর্বর এবং সেচ ও নিকাশের সুবিধেযুক্ত হওয়া প্রয়োজন। মরিচ উষ্ণ ও শুষ্ক জলবায়ুর ফসল।
মরিচের জাত:
মরিচের কোনো উদ্ভাবিত উন্নত জাত নেই। তবে বেশ কিছু স্থানীয় জাতের আবাদ এ দেশে হয়ে থাকে। এগুলো হচ্ছে বগুড়ার বালিজুরী, বোনা, বাইন ও সাইটা। এছাড়া সূর্যমুখী, পৰা, হালদা, শিকারপুরী, পাটনাই জাতের মরিচেরও আবাদ হয়ে থাকে।
মরিচ সাধারণত : সারা বছরই আবাদ হয়ে থাকে। এ ফসলের জীবনকাল ১৪০-১৬০ দিন ।
বীজ বোনার সময় :
গ্রীষ্ম বা খরিফ মৌসুমে-- মাঘের মাঝামাঝি হতে জ্যৈষ্ঠ পর্যন্ত।
রবি মৌসুমে--ভাদ্রের মাঝামাঝি হতে কার্তিক পর্যন্ত।
বীজের পরিমাণ :
মরিচ চারা রোপণ করে আবাদ হয়ে থাকে। তবে মরিচ বীজ ছিটিয়েও আবাদ করা যায়।
- ১.৫-২ কেজি প্রতি হেক্টরে -ছিটিয়ে বীজ বোনা হলে
- ৪০০-৬০০ গ্রাম প্রতি হেক্টরে-চারা রোপণ করলে
বীজ বপনের পূর্বে ২৪ ঘণ্টা সময় পানিতে ভিজিয়ে রাখলে গজানোর জন্য উত্তম হয়। বীজতলা ৩ মিটার × ১ মিটার আকারের হবে।
বীজতলায় চারা উৎপাদন ও চারা রোপণ :
মরিচ সাধারণত বীজতলায় চারা উৎপাদন করে পরে জমিতে রোপণ করতে হয়। প্রতি বর্গমিটার বীজতলায় ১০-১৫ কেজি গোবর সার বীজতলা তৈরির সময় প্রয়োগ করতে হয় । বপনের আগে বীজ ২৪ ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখলে চারা গজানোর জন্য সুবিধা হয়। চারার বয়স ৩০-৩৫ দিন হলে তা রোপণের জন্য উত্তম হয়। এজন্য জমি ঠিক মতো চাষ ও মই দিয়ে তৈরি করতে হবে। চারা রোপণের জন্য জমিতে সারি থেকে সারির দূরত্ব এবং প্রতিটি সারিতে চারা থেকে চারার দূরত্ব থাকবে ৪০ সেন্টিমিটার। চারা রোপণের গভীরতা রাখতে হয় ১.৫-৩.০ সেন্টিমিটার। এছাড়া ছিটিয়েও মরিচের বীজ বপন করা যায়।
শহরের আবাদকারীরা একই নিয়মে ফাঁকা জায়গায় বা ড্রামে মরিচের চারা রোপণ করে এর আবাদ করতে পারেন। ২৫ গ্রাম প্যাকেটে ৩৫০০ মতো বীজ থাকে। বীজ বোনার ৬-৭ দিনের মধ্যে চারা বের হয়। মাস খানেকের মধ্যে চারা গুলি ৩/৪ ইঞ্চি বড় হলে জমিতে লাগানো যাবে।
সার প্রয়োগ :
প্রতি শতক জমিতে ৬০ কেজি গোবর, ৮০০ গ্রাম টিএসপি ও ৬০০ গ্রাম এমপি সার প্রয়োগ করতে হয়। জমি চাষের সময় সমস্ত গোবর টিএসপি ও এমপি সার প্রয়োগ করতে হয়। ইউরিয়া সারের শতকরা ৫০ ভাগ চারা রোপণের ৩০ দিন পর এবং বাকী ৫০ ভাগ চারা রোপণের ৬০ দিন পর উপরি প্রয়োগ করতে হয়। শহরে যারা ড্রামে মরিচের আবাদ করতে ইচ্ছুক তারা শুধু জৈবসার যেমন খৈল, গোবর ব্যবহার করে মরিচ আবাদ করতে পারেন।
সেচ প্রয়োগ :
মরিচ জমিতে শুকনো মৌসুমে সেচ দেওয়া এবং বর্ষা মৌসুমে পানি নিকাশের ব্যবস্থা নিতে হবে।
রোগ দমন :
মরিচ যে সব রোগ দ্বারা আক্রান্ত হয়, তাহলো ফুল শুকিয়ে যায় ও ঢলে পড়া, মরিচ পচা ও হলুদ মোজাইক ভাইরাস। রোগ প্রতিরোধক জাত ব্যবহার করে এসব রোগ দমন করা যায়। প্রতিকারের ব্যবস্থা হিসেবে বোর্দো মিকচার বা কপার অক্সিক্লোরাইড নির্দিষ্ট অনুপাতে ব্যবহার করতে হবে।
পোকা মাকড় দমন :
থ্রিপস ও জাব পোকা দ্বারা মরিচ আক্রান্ত হয়ে থাকে। সমন্বিত বালাই দমন ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এসব পোকা দমন করা হয়। পোকার আক্রমণ বেশী ম্যালাথিয়ন বা ফুরাডান কীটনাশক ঔষধ ব্যবহার করা যাবে।