কৃষি দিবানিশি
‘কৃষি দিবানিশি’ কৃষি বিষয়ক ম্যাগাজিন। আমরা বিভিন্ন রকম ফসল যেমন- ধান, গম, ভূট্রা, পাট, পেয়ারা, পেপে, কলা, কুল, বড়ই, মাল্টা,মালটা, আম, লটকন সহ আরো অনেক সবজি জাতীয় ফসল যেমন - আলু, বাঁধাকপি, শিম, মূলা, মিষ্টিকুমড়া, করলা, কাঁকরোল, ঝিঁঙ্গা, গাজর, কলমীশাক, বেগুন, ফুলকপি, বরবটি, ঢেঁড়স, চালকুমড়া, শসা, ধুন্দল, পুঁইশাক, লালশাক, টমেটো, লাউ, পটল, ক্ষীরা, পানিকচু, ডাঁটা, ক্যাপসিকাম ইত্যাদি ফসলের রোগবালাই দমনে বালাইনাশক, কীটনাশক, সার, বিষ প্রয়োগ এবং ফসলের মৌসুম ও জাত সম্পর্কিত তথ্য ও পরামর্শ দিয়ে থাকি।

ম্যানকোজেব গ্রুপের কীটনাশক পরিচিতি

মানকোজেব ম্যানেব ও জিনেব নামক দুইটি ডাইথায়োকার্বামেটের সমন্বয়ে তৈরি। সাধারণত ০.২% হারে পাতায় প্রয়োগ করার সুপারিশ করে থাকেন।

ম্যানকোজেব (Mancozeb) কী?

ম্যানকোজেব হলো প্রতিরক্ষামূলক ছত্রাকনাশক৷ এটি বহুমুখী , স্পর্শক ও প্রতিরোধক ক্রিয়াসম্পন্ন ডাইথায়োকার্বামেট জাতীয় ছত্রাকনাশক৷ 

ম্যানকোজেব

এটি ম্যানেব ও জিনেব নামক দুইটি ডাইথায়োকার্বামেটের সমন্বয়ে তৈরি। এটি ছত্রাক দমন করে, গাছ বা ফসলের তেমন ক্ষতি করে না।

কীভাবে কাজ করে?

বাতাসের সাহায্যে ইহা আইসোথায়োসায়ানেটে রূপান্তরিত হয়ে ছত্রাক এনজাইমের সালফাহাইড্রাল গ্রুপকে নিষ্ক্রিয় করে দেয়৷ কখনো ম্যানকোজেব, ছত্রাক এনজাইমের উপাদানের বিনিময় ঘটিয়ে ছত্রাক এনজাইমের কাজে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে৷ এটি ছত্রাকের স্পোর অঙ্কুরোদ্গম রোধক হিসেবে কাজ করে। এটি গাছের উপরিভাগে হালকা প্রলেপ সৃষ্টি করে৷ ফলে রোগজীবাণু গাছের সংস্পর্শে আসা মাত্র মারা যায় এবং বাহির থেকে রোগজীবাণু গাছের ভিতরে প্রবেশ করতে পারে না৷ 

কোন রোগ দমন করে?

এটি ছত্রাক দ্বারা সৃষ্ট রোগ যেমন মিলডিউ,  ব্লাইট, এনথ্রাকনোজ, লিফ স্পট দমনে ভালো কাজ করে৷ এটি ফল, শাকসবজি, মাঠ ফসলে ব্যবহার করা যায়। বীজ শোধনেও ব্যবহার করা হয়। 

টমেটোর ঢলে পড়া, আলু ও টমেটোর ধসা রোগ, কলার সিগাটোকা, পেঁয়াজের পার্পল ব্লচ, অামের এনথ্রাকনোজ, মিলডিউ দমনে ভালো কাজ করে। 

এটি জিংক ও ম্যাংগানিজ আয়ন সমৃদ্ধ হওয়ায় ব্যবহারের পরপরই গাছ দ্রুত সবুজ ও সতেজ হয়৷ 

প্রয়োগমাত্রা

বিজ্ঞানীরা সাধারণত ০.২% হারে (প্রতি লিটার পানিতে দুই গ্রাম হারে) পাতায় প্রয়োগ করার সুপারিশ করে থাকেন৷

২ গ্রাম ম্যানকোজেব ১ লিটার পানির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। এরপর গাছে ভালোভাবে স্প্রে করুন। আক্রান্ত গাছে ৭ দিন পর পর সকালে বা সন্ধ্যায় ২-৩ সপ্তাহ স্প্রে করতে হবে।

ছাদ বাগানে ব্যবহারের জন্য

১৪ ইঞ্চি টবের মাটি তৈরি এর সময় ১ চা চামচ মাটির সাথে ভালো মতো মিশায়ে দেয়া যাবে। ২ লিটার পানিতে ১ চা চামচ ভালো মত গাছের পাতা ও গোড়ায় দিতে হবে।


এসিটামিপ্রিড গ্রুপের কীটনাশকের বানিজ্যিক নাম

কৃষিক্ষেত্রে ম্যানকোজেব ৮০ ডব্লিউপি ফরমুলেশনে এটি ব্যপক ব্যবহৃত হয়। বিভিন্ন কোম্পানি থেকে এটি বিভিন্ন নামে বাজারজাত করে। নিচে কিছু উল্লেখ করা হলো :

বানিজ্যিক নাম কোম্পানি
ডায়থেন এম ৪৫ বায়ার
নেকজেব ন্যাশনাল এগ্রিকেয়ার
ইন্ডোফিল এম ৪৫ অটো ক্রুপ কেয়ার
জাজ ৮০ ডব্লিউপি সিনজেনটা
এমকোজেব ৮০ ডব্লিউপি এম এইচ ক্রপ কেয়ার
কোজেব ৮০ ডব্লিউপি এআলফা এগ্রো লিমিটেড
গ্যালভেন এম -
সিনাজেব ৮০ ডব্লিউপি -
নেমিসপোর ৮০ ডব্লিউপি -
এডকোজেব ৮০ ডব্লিউপি -
ম্যানকোজেব ৮০ ডব্লিউপি -
ভিটামিল ৭২ এমজেড -
ভন্ডজেব -
সানকোজেব -
পেনকোজেব ৮০ ডব্লিউপি -
ম্যানজেট ২০০ -

সতর্কতা

এই গ্রুপের ছত্রাকনাশক মানুষের জন্য কম বিষাক্ত হলেও  বিষক্রিয়ায় প্রাণীর থাইরয়েড গ্রন্থি প্রসারিত এবং পরীক্ষামূলক প্রাণীদের মধ্যে জন্মগত ত্রুটি এবং ক্যান্সার তৈরি করেছে।

তাই প্রয়োগের সময় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। কীটনাশক প্রয়োগের ৭-১৪ দিন পর্যন্ত ফসল তোলা ও খাওয়া যাবে না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

অবাঞ্চিত মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকুন