এবামেকটিন গ্রুপের কীটনাশক পরিচিতি
এবামেকটিন মূলত কীটনাশক এবং সেইসাথে একটি অ্যাকারিসাইড (মাইটিসাইড) এবং একটি নেমাটিসাইড । এটি আগুন পিঁপড়া নিয়ন্ত্রণ করতেও ব্যবহৃত হয়। অ্যাবামেকটিন ঘোড়াকে কৃমিনাশকের জন্য মুখে দেওয়া হয়।
কৃষিক্ষেত্রে এবামেকটিন খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বালাইনাশক। যদিও এটি মাকড়নাশক হিসেবে পরিচিত, তবে বিভিন্ন ধরনের পোকা দমনেও এটি খুব কার্যকরী ভূমিকা রাখে। নিচে ভূমিকা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো৷এবামেকটিন গ্রুপের কীটনাশক পরিচিতি ও ব্যবহার
এবামেকটিন মূলত বহুল ব্যবহৃত কীটনাশক, যেটি অ্যারবামেকটিন পরিবারের সদস্য আইভারমেকটিন (উকুননাশক) থেকে পৃথক করা হয়েছে৷ এবামেকটিন একাধারে Insecticide- কীটনাশক, Acaricide- মাকড়নাশক এবং Newmatiocide- কৃমিনাশক হিসেবে কাজ করে।
কাজের ধরন
এটি স্পর্শক এবং পাকস্থলীয় গুণসম্পন্ন হওয়ায় পোকা-মাকড়ের গায়ে পড়লে পোকা মারা যায় এবং প্রয়োগকৃত গাছ-পালা পোকায় ভক্ষণ করলেও তা মারা যায়।
স্থানীয়ভাবে অনুপ্রবেশ করার ক্ষমতা থাকায় ডগা ও ফলের ভেতরে অবস্থিত পোকাও বাঁচতে পারে না।
এছাড়াও এটি ট্রান্সলেমিনার গুণসম্পন্ন হওয়ায় উপরে স্প্রে করলে পাতার এপিডার্মিস স্তর ভেদ করে নিচে চলে আসে। এতে নিচে অবস্থানরত মাকড় রস শোষণ করলেও মারা যায়।
এর কার্যকারিতা অন্যান্য সাধারণ কীটনাশকের চেয়ে কিছুটা বেশি দিন স্থায়ী থাকে৷
ব্যবহারবিধি
কৃষিক্ষেত্রে এটি সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয়ে থাকে। বিভিন্ন পোকা-মাকড়ের আক্রমণ থেকে গাছকে রক্ষা করার জন্য এটি প্রয়োগ করা হয়। যেমন :
Miticide বা মাকড়নাশক
Miticide বা মাকড়নাশক হিসেবে এটির ব্যবহার সর্বোচ্চ হয়ে থাকে। বিভিন্ন সবজি যেমন- শসা, করলা, ঝিঙা ইত্যাদি সকল কুমড়া জাতীয় ফসল, বেগুন, ঢেড়স, মরিচ, কচু এবং বিভিন্ন ফল গাছ যেমন- পেঁপে, লিচু, নারিকেল, মাল্টা ইত্যাদি সকল প্রকার ফসলে অতি ক্ষুদ্র লাল মাকড় বা মাইট আক্রমণ করে। এই মাকড় ভাইরাসের পেঁপে একটি বাহক এবং এটির আক্রমণে গাছের পাতা প্রথমত নিচের দিকে কুঁকড়ে যায় এবং পরবর্তীতে ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গাছ নষ্ট হয়ে যায়। নারিকেলের ত্বক নষ্ট হয়ে যায় এবং ফাটল ধরে। এই মাকড় দমনের জন্য আনুমানিক ৯৫% কৃষক এবামেকটিন ব্যবহার করে থাকেন। গাছকে ভাইরাসের আক্রমণ থেকে রক্ষা করে সুস্থ-স্ববল নীরোগ রাখার জন্য এবামেকটিনের গুরুত্ব বলার অপেক্ষা রাখে না৷
ফল ও ডগাছিদ্রকারী পোকা দমন
ফল ও ডগাছিদ্রকারী পোকা দমনের জন্যও এটির ব্যবহার খুবই ফলদায়ক। স্থানীয়ভাবে অনুপ্রবেশ করার ক্ষমতা থাকায় বেগুন, শিম সহ বিভিন্ন সবজির ফল ও ডগার ভেতরে লুকিয়ে থাকা পোকাও মেরে ফেলে।
ল্যাদা পোকা দমন
ল্যাদা পোকা লেবু গাছের প্রজাপতি সহ সকল প্রকার পাতা ও গাছ খাদক পোকা দমনের জন্য এটি ব্যবহার করা যেতে পারে।
জাব পোকা দমন
জাবপোকা দমনের জন্য এটি প্রয়োগ করেও খুবই সন্তষজনক ফলাফল পাওয়া গেছে। তাছাড়া অন্তর্বাহী গুন থাকার জন্য শোষক পোকাও দমন হয়।
কৃমিনাশক
কৃমিনাশক হিসেবেও এটি কাজ করে। কর্দমাযুক্ত ধান ক্ষেতে অথবা জলাবদ্ধ স্থানে চেকনা লাল সুতার মতো দেখতে এক জাতীয় নোমাটেড মাটির সাথে থেকে নড়াচড়া করতে দেখা যায়। কার্বোফুরান অথবা ফিপ্রনিনেও এটি মরে না। এটি নিয়ে কৃষকদের বড়ই অস্বস্তির মধ্যে থাকতে দেখা যায়। এবামেকটিন হচ্ছে এর সহজ সমাধান। ৩৩ শতকে ১৫০-২০০ মিলি এবামেকটিন ১.৮ ইসি সারের সাথে মিশিয়ে প্রয়োগ করলে অল্প সময়ের মধ্যেই এগুলো মারা যায়।
- কলা গাছের পানামা রোগ নোমাটেডের মাধ্যমে ছড়ায়। শিম, পটল ইত্যাদি গাছের শেকড় নষ্ট করে দেয়। এ সকল সমস্যায় অভিজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে এবামেকটিন দিয়ে ট্রিটমেন্ট করা যেতে পারে।
- নেমাটোডের আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে এবামেকটিন দিয়ে বীজও শোধন করা যায়।
- মাছের উকুন এবং অন্যান্য কিছু পোকার জন্য এটি পুকুরে প্রয়োগ করে সন্তষজনক ফলাফল পাওয়া যায়।
এছাড়াও এটি আগুন পিঁপড়ে, ছারপোকা ও অন্যান্য পরজীবী পোকা দমনে গবাদি পশুর ঘরেও স্প্রে করা যেতে পারে।
মাত্রা
সাধারণত সবজির ক্ষেত্রে ১০ লিটার পানিতে ১২ মিলি মিশিয়ে প্রয়োগ করতে হয়৷ তবে চা, পাট, বেগুন, বিভিন্ন ফল গাছ ইত্যাদির ক্ষেত্রে ১০ লিটার পানিতে ২০-২৫ মিলি মিশিয়ে স্প্রে করতে হয়।
বিষাক্ততা
এবামেকটিনকে পরিবেশবান্ধব বলা যায়। মৌমাছির জন্য এটি খুব কম বিষাক্ত তবে যদি তারা এটি খেয়ে নেয় অথবা সরাসরি তাদের গায়ে স্প্রে করা হয় বা সংস্পর্শে আসে তাহলে মারা যেতে পারে।
স্প্রে করার ২৪ ঘণ্টা পর এটি মৌমাছির জন্য আর বিষাক্ত হয় না৷
ক্রস প্রতিক্রিয়া
অন্যান্য সাধারণ কীটনাশকের সাথে মিশিয়ে স্প্রে করা যায়৷ তবে এটিকে ছত্রাকনাশকের সাথে মেশাতে নিষেধ করা হয়ে থাকে৷
বাণিজ্যিক নাম বিভিন্ন কোম্পানি থেকে এটি বিভিন্ন নামে এবং বিভিন্ন ফরমুলেশনে বাজারজাত করে। তবে ১.৮ ইসি লিকুইড ফরমুলেশনে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়। এর প্রতি লিটারে ১৮ গ্রাম এবামেকটিন আছে, তাই একে "১.৮ ইসি" বিষ বলা হয়ে থাকে।
নিচে কিছু নাম দেয়া হলো
এবামেকটিন গ্রুপের কীটনাশকের বানিজ্যিক নাম ও কোম্পানির নামের তালিকা
বানিজ্যিক নাম | কোম্পানি |
---|---|
টক্সিমাইট ১.৮ ইসি | স্কয়ার |
সানমেকটিন ১.৮ ইসি | অটো ক্রপ কেয়ার |
একামাইট ১.৮ ইসি | এসি আই ক্রপ কেয়ার |
ডেমেকটিন ১.৮ ইসি | দি লিমিট এগ্রো প্রডাক্টস |
লাকাদ ১.৮ ইসি | ইনতেফা |
লিকার ১.৮ ইসি | করবেল ইন্টারন্যশনাল |
সানটেক ১.৮ ইসি | Raven Agro C.l |
এবোম ১.৮ ইসি | ম্যাকডোনাল্ড |
অ্যামবুশ ১.৮ ইসি | হেকেম বাংলাদেশ |
ভার্টিমেক ১.৮ ইসি | সিনজেনটা |
টাইটিন ১.৮ ইসি | সুইট এগ্রোভেট লি. |
এছাড়াও এবামেকটিন WDG বা দানাদার ফর্মেও পাওয়া যায়। যেমন- অটো ক্রুপ এর "সিয়েনা"তে ২% এবামেকটিন এবং ৪% এমামেকটিন বেনজয়েট থাকে৷
মূল্য
বর্তমানে ১০০ মিলি এবামেকটিন ১.৮ ইসি সাধারণত ১০০-১২০ টাকায় খুচরা বিক্রি হয়ে থাকে। ৪০০ মিলি সাইজগুলো ৩৫০-৪০০ টাকায় পাওয়া যায়।
এবামেকটিন ১.৮ ইসি এর কাজ কি?
বিভিন্ন সবজি যেমন- শসা, করলা, ঝিঙা ইত্যাদি সকল কুমড়া জাতীয় ফসল, বেগুন, ঢেড়স, মরিচ, কচু এবং বিভিন্ন ফল গাছ যেমন- পেঁপে, লিচু, নারিকেল, মাল্টা ইত্যাদি সকল প্রকার ফসলে অতি ক্ষুদ্র লাল মাকড় বা মাইট এবং চায়ের লাল মাকড় দমনে কার্যকরী।
এবামেকটিন কি মানুষ খেতে পারে?
অ্যারবামেকটিন পরিবারের সদস্য। এটি স্পর্শক এবং পাকস্থলীয় গুণসম্পন্ন হওয়ায় পোকা-মাকড়ের গায়ে পড়লে পোকা মারা যায়। তবে মানুষের শরীরে পড়লে বা খেয়ে ফেললে সমস্যা হয় না।
এবামেকটিন কি মৌমাছির জন্য ক্ষতিকর?
এবামেকটিন স্পর্শক এবং পাকস্থলীয় গুণসম্পন্ন হওয়ায় পোকা-মাকড়ের গায়ে পড়লে পোকা মারা যায় এবং প্রয়োগকৃত গাছ-পালা পোকায় ভক্ষণ করলেও তা মারা যায়। মৌমাছির জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।
নিজ অভিজ্ঞতা এবং কিছু বিশ্বস্ত সূত্র থেকে তথ্য নিয়ে পোস্টটি লিখা হয়েছে। পোস্টটিতে কোথাও ভুল অথবা সন্দেহজনক কিছু মনে হলে তা শেয়ার করে সংশোধনের সুযোগ দিবেন আশা করি।
1 টি মন্তব্য
-
জাভেদ ৩০ অক্টোবর, ২০২৩ এ ১:৩৮ PM রুসল আইপিএম এর "বায়োম্যাক্স এম" কে এই লিস্ট এ অন্তর্ভুক্ত করুন https://russellipmbd.com/ipme/index.php/biomax/