কৃষি দিবানিশি
‘কৃষি দিবানিশি’ কৃষি বিষয়ক ম্যাগাজিন। আমরা বিভিন্ন রকম ফসল যেমন- ধান, গম, ভূট্রা, পাট, পেয়ারা, পেপে, কলা, কুল, বড়ই, মাল্টা,মালটা, আম, লটকন সহ আরো অনেক সবজি জাতীয় ফসল যেমন - আলু, বাঁধাকপি, শিম, মূলা, মিষ্টিকুমড়া, করলা, কাঁকরোল, ঝিঁঙ্গা, গাজর, কলমীশাক, বেগুন, ফুলকপি, বরবটি, ঢেঁড়স, চালকুমড়া, শসা, ধুন্দল, পুঁইশাক, লালশাক, টমেটো, লাউ, পটল, ক্ষীরা, পানিকচু, ডাঁটা, ক্যাপসিকাম ইত্যাদি ফসলের রোগবালাই দমনে বালাইনাশক, কীটনাশক, সার, বিষ প্রয়োগ এবং ফসলের মৌসুম ও জাত সম্পর্কিত তথ্য ও পরামর্শ দিয়ে থাকি।

ধুন্দল চাষ পদ্ধতি ও জাত পরিচিতি

ধুন্দল একটি অতি সাধারণ সবজি। এর শাঁস নরম ও সুস্বাদু। ফেব্রুয়ারী থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত ধুন্দল চাষ করা হয়। ৩৫-৪৫ দিনে ফলন পাওয়া যায়...

ধুন্দল একটি অতি সাধারণ সবজি। এটি বাংলাদেশে বহুল পরিচিত একটি সবজি। আমাদের দেশে দুই ধরনের ধুন্দল পাওয়া যায়। একটি হলো সাধারণত আমরা যেটা খাই। এর শাঁস নরম ও সুস্বাদু। আর এক ধরনের বন্য ধুন্দল আছে যাকে তিত পল্লা বলা হয়। এর ফল শুকিয়ে খোসা তৈরি করা হয়ে থাকে যা দিয়ে গায়ে সাবান মাখা যায়।

ধুন্দল

আজ আমরা আপনাদের সাথে  ধুন্দল চাষের আধুনিক পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করব। এতে করে আপনারা সহজেই ধুন্দল চাষের বিস্তারিত জানতে পারবেন।

ধুন্দল চাষ পদ্ধতি

ধুন্দলের বীজ বপন / চারা রোপণের পূর্বে কিছু প্রস্তুতি নিতে হবে।  যেমন : সঠিক জমি নিবার্চন,  জমি প্রস্তুতকরণ,  জাত নির্বাচন, বীজ থেকে চারা তৈরি করা, বাউনি বা মাচা দেওয়া ইত্যাদি। 

চাষের জমি

ধুন্দল চাষে জমির প্রথম শর্ত হচ্ছে উঁচু, পানি জমে থাকে না, গাছের কোনো ছায়া থাকে না এমন জমি নির্বাচন করতে হবে। দোআঁশ ও বেলে দোআঁশ ধুন্দল চাষের জন্য উত্তম । মাটি উর্বর এবং সেচ ও নিষ্কাশন সুবিধাযুক্ত হওয়া বাঞ্ছনীয়।

জমি প্রস্তুতকরণ

জমি ৩- ৪ বার ভালোভাবে চাষ ও মই দিয়ে ধুন্দুল চাষের জন্য প্রস্তুত করতে হবে। জমির মাটি ভালো করে আগাছামুক্ত ও ঝুরঝুরে করে নিতে হবে। এরপর ১ ফুট গভীর, ২.৫ ফুট লম্বা এবং ২.০ ফুট চওড়া করে মাদা তৈরি করতে হবে। এক মাদা থেকে অপর মাদার দূরত্ব হবে ৮-১০ ফুট। জমির চেয়ে মাদা কমপক্ষে ৫-৬ ইঞ্চি উঁচু করে তৈরি করতে হবে।

ধুন্দল চাষের উপযুক্ত সময় 

ফেব্রুয়ারী থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত ধুন্দল চাষ করা যায়।  তবে কিছু বারোমাসি জাত রয়েছে যেগুলো সারাবছর চাষ করা যায়। 

বীজের পরিমাণ

বিঘা প্রতি ৩৩০-৪০০ গ্রাম (শতক প্রতি ১০-১২ গ্রাম) বীজের প্রয়োজন।

বীজ বপন

বীজ বোনার আগে দেড় থেকে দু-দিন ভিজিয়ে রেখে জাত বেধে মাদা প্রতি ২-৪ টি বীজ বপন করতে হবে। 

চারা তৈরি

ধুন্দলের চারা তৈরির ক্ষেত্রে প্রথমে বীজ রোদে শুকিয়ে নিতে হবে। অতঃপর পানিতে ২৪ ঘণ্টা ভিজিয়ে  রাখতে হবে । ভিজানো বীজ টিস্যু পেপারে অথবা শুকনা কাপড় দিয়ে পেঁচিয়ে,  আর্দ্রতা আছে এমন জায়গায় রাখতে হবে। ২৪-৩৬ ঘণ্টা পরে কোন বের হলে টি কাপ বা সিডিং ট্রে-তে ককোপিট ও জৈব সার মিশ্রিত করে বীজ বপন করতে হবে। জৈব সার ও মাটি ব্যবহার করতে পারবেন।  তবে আলো বাতাস যেন না যায় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। অঙ্কুর বের হলে আলোতে দিতে হবে। 

চারা রোপণ 

বীজ তলা থেকে সুস্থ চারা সংগ্রহ করতে হবে।  জাত বেধে ২-৪ টি চারা রোপণ করা যায়।  চারা বিকেল বেলায় রোপণ করা উত্তম এবং রোপণের পূর্বে হালকা পানি স্প্রে করে দিলে চারা মারা যাওয়ার হার কমে যায়।  রোপণের পর অবশ্যই অল্প পরিমাণে পানি দিতে হবে। 

বাউনি দেওয়া

ধুন্দলের কাঙ্ক্ষিত ফলন পেতে অবশ্যই মাচায় চাষ করতে হবে। ধুন্দল মাটিতে চাষ করলে ফলের একদিক বিবর্ণ হয়ে বাজার মূল্য কমে যায়, ফলে পচন ধরে এবং প্রাকৃতিক পরাগায়ন কম হয় এজন্য ফলন কমে যায়।

ধুন্দলের জাত পরিচিতি

বাংলাদেশে হাইব্রিড ও দেশি দুই ধরনের ধুন্দল চাষ করা হয়। তিক্ত স্বাদ, কম ফলন ও রোগবালাইয়ের আক্রমণ বেশি হওয়ায় দেশি জাত চাষ হ্রাস পেয়েছে। বিপরীতে হাইব্রিড জাত গুলো নরম, দীর্ঘদিন রাখা ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি এবং উচ্চ ফলনের কারণে জনপ্রিয় পাচ্ছে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনিস্টিউটের সংকর জাত গুলোও সাড়া ফেলছে কৃষকদের মাঝে। নিচে ধুন্দলের কিছু উন্নত জাত নিয়ে আলোচনা করা হলো।

জাতের নাম ফসল সংগ্রহ একর প্রতি রোপণের সময় বিশেষ বৈশিষ্ট্য
হাইব্রিড ধুন্দল ফুজিয়ান ৩৫-৪০ দিনে ১২-১৪ টন ফেব্রুয়ারী থেকে আগষ্ট ফলের রঙ হালকা সবুজ। ফল ২৫-৩০ সেমি লম্বা এবং গড় ওজন ১৮০-২০০ গ্রাম।
হাইব্রিড ধুন্দল আর্তি ৪৫ থেকে ৫০ দিনে ১২-১৪ টন সারা বছর আর্তি ধুন্দল এর ত্বক মোলায়েম, প্রতিটি ফল একই আকৃতির হয় এবং ফল বেঁকে যায় না।এর ফলের বয়স বেশি হলেও ভিতরে ফাঁপা হয় না এবং বীজের রঙ সাদা যা মানুষ পছন্দ করে
হাইব্রিড ধুন্দল ফোরলান ১০ ৩৫-৪০ দিনে ১৪-১৬ টন ফেব্রুয়ারি থেকে আগষ্ট হাইব্রিড ধুন্দল ফোরলান ১০ দ্রুত বর্ধনমীল জাত। গাড় সবুজ রঙের ফল। ফলের ওজন ১৬০-২০০ গ্রাম। ফলের দৈঘ্য ২৬-৩০ সেন্টিমিটার লম্বা।
হাইব্রিড ধুন্দল রুপসী ৪০-৪৫ দিন ১২-১৫ মেট্রিক টন ফেব্রুয়ারি-আগষ্ট হালকা সবুজ রংয়ের মাঝারী আকৃতির এবং আগাম জাতের হাইব্রিড। ফলের ওজন : ১৮০-২০০ গ্ৰাম।
হাইব্রিড ধুন্দল মমতা ৪৫ থেকে ৫০ দিনে ১২-১৫ মেট্রিক টন সারা বছর মমতা ধুন্দল এর ত্বক মোলায়েম, প্রতিটি ফল একই আকৃতির হয় এবং ফল বেঁকে যায় না এই ধুন্দল খেতে মিষ্টি ও সুস্বাদু
হাইব্রিড ধুন্দল শোভন ৩৫ থেকে ৪০ দিনে ১৪-১৬ টন। ডিসেম্বর থেকে সেপ্টেম্বর প্রতিটি ফল একই আকৃতির হয় এবং ফল বেঁকে যায় না। এর ফলের বয়স বেশি হলেও ভিতরে ফাঁপা হয় না এবং বীজের রঙ সাদা যা মানুষ পছন্দ করে

ধুন্দল চাষে সার ব্যবস্থাপনা

যেকোনো ফসল চাষে করতে সার ব্যবস্থাপনা অতীব গুরুত্বপূর্ণ কাজ। সঠিক মাত্রায় সার প্রয়োগ না করতে পারলে কাঙ্ক্ষিত ফলন পাওয়া যায় না। সঠিক মাত্রার পাশাপাশি সঠিক সময়েও সার প্রয়োগ গুরুত্বপূর্ণ। নিচে ধুন্দল চাষে সার ব্যবস্থাপনা নিয়ে আলোচনা করা হলো।

শেষ চাষের সময় প্রয়োগ করতে হবে
সারের নাম একর প্রতি শতক প্রতি
পঁচা গোবর ৬ টন ৬০ কেজি
ইউরিয়া ৩০ কেজি ৩০০ গ্রাম
টিএসপি ৭০ কেজি ৭০০ গ্রাম
এমওপি ৬০ কেজি ৬০০ গ্রাম
জিপসাম ৪০ কেজি ৪০০ গ্রাম
দস্তা ৫ কেজি ৫০ গ্রাম
বোরন ৪ কেজি ৪০ গ্রাম
ম্যাগনেশিয়াম ৫ কেজি ৫০ গ্রাম

ওপরে উল্লেখিত পরিমাণ অনুসারে সার জমিতে প্রয়োগ না করে মাদায়ও প্রয়োগ করতে পারেন সে ক্ষেত্রে প্রতি মাদায় পচা গোবর, ছাই, পচা কচুরিপানা, জৈব সার ইত্যাদি মিলিয়ে ৫-৬ কেজি, ১০০ গ্রাম টিএসপি, ৬০-৭০ গ্রাম এমপি সার প্রয়োগ করে মাটিতে ভালোমতো মিশিয়ে দিতে হবে। এবং ৫-৬ দিন অপেক্ষা করে বীজ বপন করতে হবে। চারার রোপণের ১৫/২০ দিন পর প্রয়োজন অনুযায়ী মাদা প্রতি ৫০গ্রাম (কম বেশি) ইউরিয়া সার প্রয়োগ করতে হবে  

পোকামাকড় ও রোগবালাই

ধুন্দল চাষের ক্ষেত্রে যেসব পোকামাকড় ও রোগবালাইয়ের আক্রমণ ঘটে ডাউনি মিলডিউ, পাতা কোকড়ানো রোগ, পাতার দাগ রোগ, পাতা ছিদ্রকারী পোকা, কাঠালে পোকা, মাছি পোকা, ফ্লি বিটল ইত্যাদি পোকার আক্রমণ ঘটে।  নিচে ধুন্দল পোকামাকড় ও রোগবালাই প্রতিরোধ ও প্রতিকার নিয়ে আলোচনা করা হলো।

ধুন্দলের ডাউনি মিলডিউ রোগ

বয়স্ক পাতায় এ রোগ প্রথম দেখা যায়। আক্রান্ত পাতার গায়ে সাদা বা হলদে থেকে বাদামী রংয়ের তালির মত দাগ দেখা যায়। ধীরে ধীরে অন্যান্য পাতায় ছড়িয়ে পড়ে ।  

প্রতিকার 

  • সম্ভব হলে গাছের আক্রান্ত অংশ সংগ্রহ করে ধ্বংস করা । 
  • (ম্যানকোজেব+মেটালোক্সিল) গ্রুপের ছত্রাকনাশক যেমন: পুটামিল বা রিডোমিল গোল্ড অথবা (ম্যানকোজেব+ ফেনামিডন) গ্রুপের ছত্রাকনাশক যেমন: সিকিউর ২ গ্রাম/প্রতি লিটার হারে অথবা সালফার গ্রুপের ছত্রাকনাশক যেমন: কুমুলাস ২ কেজি/ হেক্টর হারে বা গেইভেট বা মনোভিট বা ম্যাকভিট ২ মিলি. / লি হারে পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করা ।

ধুন্দলের পাতা কোকড়ানো রোগ

এটি একটি ভাইরাস জনিত রোগ। সাদা মাছি দ্বারা ভাইরাস ছড়ায় । আক্রান্ত গাছ খর্বাকৃতি হয় । পাতার গায়ে টেউয়ের মত ভাজের সৃষ্টি হয়, কুঁচকে যায় । বয়স্ক পাতা পুরু ও মচমচে হয়ে যায় । অতিরিক্ত শাখা প্রশাখা বের হয় ও ফুল ফল ধারণ ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে ।

প্রতিকার
  • গাছ সংগ্রহ করে ধ্বংস করা ।
  • রোগমুক্ত গাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করা ।
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন জাত ব্যবহার করা ।
  • ভাইরাসের বাহক পোকা দমনেহার জন্য ডায়ামেথেয়ট, এসাটাফ, এডমেয়ার, টিডো, ইত্যাদি যে কোন একটি ১ মিলি /লিটার হারে পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করা) ।

ধুন্দলের পাতার দাগ রোগ

আক্রান্ত পাতায় রিংযুক্ত দাগ দেখা যায় ।

প্রতিকার 
  • আক্রান্ত গাছের অংশ সংগ্রহ করে নষ্ট করা ।
  • রিডোমিল গোল্ড ২ গ্রাম/প্রতি লিটার পানি মিশিয়ে স্প্রে করা ।

ধুন্দলের পাতা ছিদ্রকারী পোকা

ক্ষুদ্র কীড়া পাতা খেয়ে ছিদ্র করে ফেলে।

প্রতিকার 
  • আক্রান্ত পাতা কীড়াসহ সংগ্রহ করে ধ্বংশ করা বা পুড়ে ফেলা।
  • উপকারি পোকা লালন করা ।
  • সাইপারমেথ্রিন গ্রুপের কীটনাশক ( যেমন: কট ১০ ইসি) ১ মি.লি. / লি. হারে পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করা। 

ধুন্দলের কাঠালে পোকা

পূর্ণ বয়স্ক বিটল ও গ্রাব উভয়েই পাতা খায় । আক্রন্ত পাতা ঝাঁঝরা করে, পরে পাতা শুকিয়ে যায় এবং ঝরে পাড়ে ।

প্রতিকার
  • ক্ষেত পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখা ।
  • গাছে ছাই ছিটানো ।
  • পরজীবী বোলতা সংরক্ষণ করা ।
  • ডিম ও কীড়া নষ্ট করা এবং পোকা সংগ্রহ করে মেরে ফেলা ।
  • শতকরা ১০ ভাগ পাতা পোকা দ্বারা আক্রান্ত হলে প্রতি লিটার পানিতে ডেনিটল/ট্রিবন-১ মিঃলিঃ বা সুমিথিয়ন-২ মিঃলিঃ বা সেভিন ২ গ্রাম মিশিয়ে স্প্রে করা ।

ধুন্দলের মাছি পোকা

স্ত্রী মাছি কচি ফলের নিচের দিকে ওভিপজিটর ঢুকিয়ে ডিম পাড়ে। ডিম পাড়ার স্থান থেকে পানির মত তরল পদার্থ বেড়িয়ে আসে যা শুকিয়ে বাদামী রং ধারন করে । ডিম থেকে কীড়া বের হয়ে ফলের শাস খেতে শুরু করে এবং ফল বিকৃত হয়ে যায় এবং হলুদ হয়ে পঁচে ঝড়ে যায়।

প্রতিকার
  • আক্রান্ত ফল বা ফুল সংগ্রহ করে ধ্বংশ করা বা পুড়ে ফেলা।
  • কচি ফল কাগজ বা পলিথিন দিয়ে ঢেকে দেয়া ।
  • প্রথম ফুল আসা মাত্র কুমড়া জাতীয় ফসলের ফেরোমন ফাঁদ স্থাপন করা। প্রতি ১০ শতাংশের জন্য ৩ টি হারে ।
  • আম বা খেজুরের রসে সামান্য বিষ মিশিয়ে তা বোতলে রেখে জানালা কেটে দিয়ে ক্ষেতের মাঝে মাঝে স্থাপন করা।
  • পাকা মিষ্টি কুমড়া বা কুমড়া জাতীয় ফল ১০০ গ্রাম কুচি কুচি করে কেটে তাতে সামান্য বিষ ( যেমন- সপসিন ০.২৫ গ্রাম ) মিশিয়ে তা দিয়ে বিষটোপ তৈরী করে মাটির পাত্রে করে ক্ষেতের মাঝে মাঝে স্থাপন করা।
  • সাইপারমেথ্রিন গ্রুপের কীটনাশক ১ মি.লি. / লি. হারে পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করা। 

ধুন্দলের ফ্লি বিটল পোকার

পূর্ণ বয়স্ক ও বাচ্চা উভয়ই ক্ষতি করে । পূর্ণ বয়স্করা চারা গাছের বেশি ক্ষতি করে । এরা পাতা / ফুলের পাপড়ি ছোট ছোট ছিদ্র করে খায় ।

প্রতিকার
  • হাত জাল দ্বারা পোকা সংগ্রহ ।
  • পরিস্কার পরিচ্ছন্ন চাষাবাদ ।
  • চারা গাছ জাল দিয়ে ঢেকে দেওয়া ।
  • আক্রান্ত গাছে ছাই ছিটানো
  • ০.৫% ঘনত্বের সাবান পানি অথবা ৫ মিলি তরল সাবান প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করা ।
  • ৫০০ গ্রাম নিম বীজের শাঁস পিষে ১০ লিটার পানিতে ১২ ঘন্টা ভিজিয়ে রেখে তা ছেঁকে আক্রান্ত ক্ষেতে স্প্রে করলে উপকার পাওয়া যেতে পারে ।

ধুন্দল চাষে পরিচর্যা

যেকোনো ফসল আবাদ করলে তার সঠিক পরিচর্যা গুরুত্বপূর্ণ।  সঠিক পরিচর্যা না করলে ভালো ফলন পাওয়া যায় না।  ধুন্দল চাষের ক্ষেত্রে সেচ, আগাছা দমন সহ যা যা পরিচর্যা নিতে হবে তা নিচে আলোচনা করা হলো। 

সেচ ও নিষ্কাশন ব্যবস্থা

মাটির অবস্থার উপর ভিত্তি করে জমিতে সেচ দিতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে জমিতে যেন অতিরিক্ত পানি না জমে থাকে। এবং থাকলে তা বের করে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

 আগাছা দমন ও পরিচর্যা

প্রতি মাদায় ৩-৪টি সুস্থ-সবল গাছ রেখে বাকিগুলো তুলে ফেলতে হবে। গাছ বৃদ্ধির সাথে সাথে জমিতে গাছের গোড়ার পাশে বাঁশের কুঞ্চি বা কাটি পুঁতে দিতে হবে। যাতে করে মাচায় বা জাংলায় সহজে উঠতে পারে। জমিতে মাচা ৩-৪ ফুট উঁচু করে দিলে ভালো হয়। জমিতে আগাছা জন্মালে পরিষ্কার করে দিতে হবে। ১৫-২০ দিন পর পর প্রতি মাদায় ৫০ গ্রাম হারে ইউরিয়া সার উপরি প্রয়োগ করতে হবে।

ফল সংগ্রহ

বীজ বপনের ৪০-৪৫ দিনের মধ্যে ফসল সংগ্রহ শুরু করা যায়। শরৎ কাল পর্যন্ত ধুন্দল তোলা যায়। ফল বোঁটা কেটে সংগ্রহ করতে হবে। খাওয়ার জন্য কচি থাকতেই সবুজ রঙের ধুন্দল তুলতে হবে। খোসা শক্ত হয়ে এলে তা আর খাওয়ার উপযুক্ত থাকে না।

 ফলন

রোগমুক্ত, উন্নত জাতের বীজ, আধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতি ও সঠিক নিয়ম অনুযায়ী চাষ করলে শতক প্রতি ১২০-১৪০ কেজি এবং একরপ্রতি ১২-১৪ টন ফলন পাওয়া যেতে পারে। এছাড়াও হেক্টর প্রতি ৫০,০০০টি ধুন্দুল উৎপাদন করা সম্ভব।

ধুন্দল চাষ সম্পর্কিত প্রশ্ন উত্তর

ধুন্দল গাছে মাচা দিতে হয়?

ধুন্দল লতানো উদ্ভিদ। মাচা দিলে ভালো ফলন পাওয়া যায়। তবে মাচা ছাড়াও চাষ করা যায়।

শতাংশ প্রতি কি পরিমাণ ধুন্দলের বীজ লাগে?

শতাংশ প্রতি ৪/৫ গ্রাম ধুন্দলের বীজ লাগে। মাদা প্রতি ২/৩ টি বীজ।

ধুন্দল চাষে কি পরিমাণ সার দিতে হয়?

মাদা প্রতি ৫/৬ কেজি গোবর, ১০০ গ্রাম টিএসপি, ৫০/৬০ গ্রাম এমওপি সার দিয়ে মাদা প্রস্তুত করতে হয়।

ধুন্দল চাষে মাদা থেকে মাদার দূরত্ব কতো?

ধুন্দল চাষে মাদা থেকে মাদার দূরত্ব ৬ থেকে ১০ ফিট পর্যন্ত হয়ে থাকে।

ধুন্দল চাষে মাদা তৈরি করবো কিভাবে?

জমির আগাছা পরিস্কার করে, ১ ফুট গভীর, ২.৫ ফুট লম্বা এবং ২.০ ফুট চওড়া মাদা তৈরি করতে হবে।

ধুন্দল কতো দিনে সংগ্রহ করা যায়?

হাইব্রিড জাতের ধুন্দল ৩৫ থেকে ৪৫ দিনে সংগ্রহ করা যায়।

ধুন্দল উন্নত জাত

হাইব্রিড ধুন্দল ফুজিয়ান, হাইব্রিড ধুন্দল আর্তি, হাইব্রিড ধুন্দল ফোরলান ১০, হাইব্রিড ধুন্দল রুপসী, হাইব্রিড ধুন্দল মমতা, হাইব্রিড ধুন্দল শোভন ইত্যাদি ধুন্দলের উন্নত জাত

ধুন্দল চাষের উপযুক্ত সময় ?

ফেব্রুয়ারী থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত ধুন্দল চাষ করা যায়। তবে কিছু বারোমাসি জাত রয়েছে যেগুলো সারাবছর চাষ করা যায়।

ধুন্দলের কোন পোকামাকড় আক্রমণ করে?

ধুন্দলের পাতার দাগ, পাতা কোকড়ানো রোগ ও ডাউনি মিলডিউ রোগ দেখা যায়।

ধুন্দলের রোগ কি কি?

ধুন্দলের পাতার দাগ, পাতা কোকড়ানো রোগ ও ডাউনি মিলডিউ রোগ দেখা যায়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

অবাঞ্চিত মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকুন