কৃষি দিবানিশি
‘কৃষি দিবানিশি’ কৃষি বিষয়ক ম্যাগাজিন। আমরা বিভিন্ন রকম ফসল যেমন- ধান, গম, ভূট্রা, পাট, পেয়ারা, পেপে, কলা, কুল, বড়ই, মাল্টা,মালটা, আম, লটকন সহ আরো অনেক সবজি জাতীয় ফসল যেমন - আলু, বাঁধাকপি, শিম, মূলা, মিষ্টিকুমড়া, করলা, কাঁকরোল, ঝিঁঙ্গা, গাজর, কলমীশাক, বেগুন, ফুলকপি, বরবটি, ঢেঁড়স, চালকুমড়া, শসা, ধুন্দল, পুঁইশাক, লালশাক, টমেটো, লাউ, পটল, ক্ষীরা, পানিকচু, ডাঁটা, ক্যাপসিকাম ইত্যাদি ফসলের রোগবালাই দমনে বালাইনাশক, কীটনাশক, সার, বিষ প্রয়োগ এবং ফসলের মৌসুম ও জাত সম্পর্কিত তথ্য ও পরামর্শ দিয়ে থাকি।

বালাইনাশক কি? বালাইনাশক পরিচিতি ও ব্যবহার

বালাইনাশক

বালাইনাশক পরিচিতি ও বালাইনাশক ব্যবহার

বালাইনাশক হলো বিষাক্ত পদার্থ, যা মানুষ, পশুপাখি, কৃষি, পরিবেশ, বাতাস, পানি, মাটি, আবহাওয়াকে দারুণভাবে প্রভাবিত করে। এ জন্য বালাইনাশকের ব্যবহার অত্যন্ত সচেতনতার সঙ্গে করতে হয়।

যারা কৃষি কাজের সাথে জড়িত আছেন, তাদের  Pesticide বা বালাইনাশক সম্পর্কে কিছুটা ধারণা রাখা অত্যন্ত প্রয়োজন। যেমন :-

  • বালাইনাশক কত ধরনের হতে পারে? 
  • কোনটি কীভাবে কাজ করে?
  • কোন বালাই এর জন্য কোন  Pesticide বা বালাইনাশক ব্যবহার করা যেতে পারে?
  • কোনটি কখন ব্যবহার করা উত্তম?

এর সাথে কিছু পোকা-মাকড়কেও চিনে রাখা জরুরি, যেগুলো সাধারণত সব জায়গায় দেখা যায়, ফসলের ব্যাপক ক্ষতিসাধন করে। 

ফসলের কিছু কমন ভাইরাসবাহী, ছত্রাকজনিত ও ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ সম্পর্কেও ধারনা রাখা দরকার। 

এ সকল বিষয়ে কিছুটা জ্ঞান রাখলে যে যে উপকার হতে পারে :- 

  • অন্যেরা ভুল পরামর্শ দিলে তা বুঝতে পারবেন। 
  • ক্ষতি হওয়ার আগেই সমস্যা চিহ্নিত করতে পারবেন। 
  • ছোট-খাটো বিষয়ে বার বার অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের হাত-পা ধরতে হবে না। 
  • অভিজ্ঞদের চূড়ান্ত পরামর্শ পাওয়ার আগেই আপনি সাময়িক ব্যবস্থা নিতে পারবেন।
  • আপনার প্রকৃত সমস্যাটি চিহ্নিত করতে ও বর্ণনা করতে পারবেন। 

আসলে বহু জায়গায় এমন কীটনাশক বিক্রেতাও আছেন, যাহারা জীবনে কখনও কাঁদায় পা মোবারক রাখেন নাই।  তাহারা শুধু বিক্রি করতেই জানেন। এদের পরামর্শে ত্রুটি  থাকতেই পারে। এর দায়ভার তারা নেবে না। আপনার বোঝা আপনাকেই বহন করতে হবে। 

তাই এ বিষয়ে কিছুটা জ্ঞান রাখা অত্যন্ত জরুরি, বিশেষ করে বর্তমান শিক্ষিত কৃষকদের। 

এ বিষয়ে আমার স্বল্প জ্ঞানে যতটুকু সম্ভব আলোচনা করার চেষ্টা করলাম। ভুলত্রুটি হয়ে থাকলে জানিয়ে দেয়ার জন্য অনুরোধ করলাম। 


Pesticide (পেস্টিসাইড) বা বালাইনাশক  কী?

পেস্টিসাইড বা বালাইনাশক মূলত ফসলের ক্ষতিকর উদ্ভিদ বা প্রাণী, যেমন— পোকামাকড়, জীবাণু, আগাছা, ইঁদুর ইত্যাদি দমন বা তাদের আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য ব্যবহৃত দ্রব্য বা দ্রব্যের মিশ্রণ বা কৌশল। 

Pesticide শব্দটি দুটি অংশ দ্বারা গঠিত। Pest (পেস্ট) এবং  Cide (সাইড)। 

Pesticide সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে হলে প্রথমে জানতে হবে pest কী? 


pest কী?

Pest (পেস্ট)- কৃষি ক্ষেত্রে ফসল উৎপাদনের বিভিন্ন পর্যায়ে যে সকল উদ্ভিদ বা প্রাণী প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মানুষের ক্ষতি সাধন করে থাকে, তাদেরকে  Pest বা বালাই বলে। উদাহরণত- 

  • বিভিন্ন ধরনের পোকা-মাকড় ফসল নষ্ট করে মানুষের ক্ষতি করে থাকে, তাহলে পোকা-মাকড় (Insects) হচ্ছে এক ধরনের pest.
  • ছত্রাক, ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাস বিভিন্ন রোগ ছড়িয়ে ফসলের ক্ষতি করে থাকে। তাহলে এগুলোও এক প্রকার  Pest.
  • বিভিন্ন প্রকার আগাছা ফসলের ক্ষতি করে থাকে। তাহলে আগাছাও এক প্রকার pest.
  • Pest এর আওতায় ইঁদুরের নাম কিন্তু মোটেও পিছিয়ে দেয়া যাবে না, কারন পেস্ট এর দায়িত্ব নেভাতে সে মোটেও অলসতা করে না। 

এভাবে ছাগল, গরু, শেয়াল, কুকুর, পাখি সহ যে কেউ ফসলের ক্ষতি করবে... সেই  Pest এর আওতায় চলে আসবে। এমন কি কোন মানুষের কারণে যদি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়, তাহলে সে অবস্থায় তাকেও  Pest বলা যেতে পারে। 


Cide কি? 

Cide- শব্দটি ল্যাটিন শব্দ  Caido থেকে এসেছে  যার অর্থ হত্যা করা। 


এবার আমরা  Pesticide এর সংজ্ঞায় বলতে পারি... Pest কে হত্যা করার জন্য যে ওষুধ, তাকেই  Pesticide বা বালাইনাষক বলা হয়। 

পেস্ট প্রতিরোধ করতে বা ধ্বংস করতে বা এদের তিব্রতা হ্রাস করতে যে সকল বস্তু বা বস্তুর মিশ্রন ব্যবহার করা হয়, সেগুলোকে পেস্টিসাইড বলে। 


বালাইনাশক কত প্রকার ও কী কী?

বালাইনাশক বা কীটনাশকে প্রধানত ৩ শ্রেণীতে ভাগ করা হয়।

  1. Nature of pesticide - বালাইনাশকের প্রকৃতির উপর ভিত্তি করে।
  2. Mode of action - কাজের ধরনের ভিত্তিতে।
  3. Chemical nature - রাসায়নিক গঠন অনুযায়ী।


Nature of pesticide বা বালাইনাশকের  প্রকৃতির উপর ভিত্তি করে একে ৮ শ্রেণীতে ভাগ করা হয়েছে। 

  1. কীটনাশক -  Insecticide
  2. ছত্রাকনাশক - Fungicide
  3. আগাছানাশক - Herbicide
  4. ইদুরানাশক - Rodenticide
  5. কৃমিনাশক - Newmatiocide
  6. মাকড়নাশক - Acaricide
  7. শৈবালনাশক - Algicide
  8. শামুকনাশক -  Limacides 

Mode of action - কাজের ধরন অনুযায়ী বালাইনাশককে ৫ ভাগে ভাগ করা হয়েছে।

  1. পাকস্থলী বিষ (Stomach)
  2. স্পর্শ বিষ (Contact)
  3. প্রবহমান বিষ (Systemic)
  4. স্থানীয় প্রবেশ ধর্মী বিষ (Residual)
  5. ধূম্র বিষ (Fumigants)

Chemical nature - রাসায়নিক গঠন অনুযাী বালাইনাশককে প্রধানত ২ ভাগে ভাগ করা হয়।

  1. Inorganic - ইনঅর্গানিক
  2. Organic - অর্গানিক 

অর্গানিক বালাইনাশককে আবার দুই ভাগ করা হয়েছে।

  1. প্রাকৃতিক  
  2. সংশ্লেষিত

বালাইনাশকের কাজ ?

ফসলের রোগ, পোকামাকড়, আগাছা দমন করে সতেজ ও সুস্থ রাখাই বালাইনাশকের কাজ। 


কীটনাশক (Insecticide) 

কীটনাশক হচ্ছে বালাইনাশকের প্রধান অংশ। যে সকল বালাইনাশক ঔষধ ফসলের ক্ষতিকারক কীটপতঙ্গ দমন ও নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে, সেগুলোকে কীটনাশক বলে৷ 

ফসলের খেতে বহু ধরনের কীট-পতঙ্গ বা পোকা দেখা যায়।  এদের দ্বারা ফসলের ব্যপক পরিমাণ ক্ষতি হয়ে থাকে।

কোনটি পাতা, ফুল-ফল ছিদ্র করে বা কুরে কুরে খেয়ে নেয়।  আবার কোনটি গাছ ও পাতার রস চুষে গাছকে একেবারে দুর্বল ও রোগাক্রান্ত করে ফেলে৷ আবার কোনটি মাটির নিচে থেকে গাছের গোড়া, শেকড় বা গাছের বাইল কেটে দেয়। 

আর তাই এদের দমন ও নিয়ন্ত্রণের জন্যই কীটনাশক বা  Insecticide ব্যবহার করা হয়। 

উদাহরণত- নিচের ছবিতে আপনারা কেয়ার এবং ইমিটাপ পাচ্ছেন। এ দুটো হচ্ছে কীটনাশক। 


ইমিটাফ,কেয়ার

ছত্রাকনাশক (Fungicide) 

বালাইনাশকের আরো একটি অন্যত্তম বড় অংশের নাম হচ্ছে ছত্রাকনাশক বা  Fungicide. 

আসলে ছত্রাক বলতে আমরা এতদিন ব্যাঙের ছাতা বা মাশরুমকেই চিনেছি। হ্যা, এগুলোও এক ধরনের (Agaricus জাতীয়) ছত্রাক, তবে কৃষিক্ষেত্রে যে ছত্রাক ক্ষতিসাধন করে, সেগুলো ভিন্ন প্রজাতির এবং এতোই ছোট যে খালি চোখে দেখা যায় না। 

ছত্রাক সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় নিজের খাদ্য তৈরি করতে পারে না, তাই এটি উদ্ভিদ নয় এবং এটি প্রাণীও নয়, বরং ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের একটি পরভোজী জীব। 

এদের বীজগুটি পানি বা বাতাসে ভেসে গাছের পাতা ও ডালপালায় পৌঁছে এবং অঙ্কুরিত হয়। দ্রবীভূত অনুগুলো শোষন করে এবং পচনের সূত্রপাত ঘটায়। 

অনুকূল আবহাওয়া পেলে এরা গাছপালায় পচন সৃষ্টির মাধ্যমে প্রচুর ক্ষতিসাধন করে থাকে। 

এরা যাতে গাছপালায় এসে অঙ্কুরিত হতে না পারে এবং মারা যায়, সে কারণে বিভিন্ন ধরনের ছত্রাকনাশক স্প্রে করা হয়ে থাকে। 

নিচের ছবিতে ম্যানকোজেব (ম্যানসার), কার্বেন্ডাজিম (আরবাআ), প্রপিকোনাজল (টিল্ট) ইত্যাদি হচ্ছে বহুল প্রচলিত ছত্রাকনাশক। 


টিল্ট,অটোস্টিন,ম্যানসার

আগাছানাশক (Herbicide)

আগাছা হচ্ছে অবাঞ্ছিত, সমস্যা সৃষ্টিকারী অনিষ্টকর উদ্ভিদ যা বপন ছাড়াই অতিমাত্রায় হয়ে থাকে। 

এরা সাধারণত প্রতিযোগী ও অদম্য এবং অধিক বংশবিস্তারে সক্ষম হওয়ায় আবাদি জমির গাছের সাথে প্রতিযোগিতা করে মাটির উর্বরতা ও খাদ্য খেয়ে নেয়। এতে গাছপালা দুর্বল হয়ে যায় এবং আশানুরূপ ফলনে বাধাগ্রস্ত হয়।  

সাধারণত নিড়ানি অথবা কোদাল দিয়ে কুপিয়ে আগাছা পরিষ্কার করা হয়ে থাকে, তবে এটি অত্যান্ত কষ্টকর, সময়সাপেক্ষ ও ব্যয়বহুল পদ্ধতি। 

এ সমস্যাগুলোর সমাধানের জন্যই আগাছানাশক ব্যবহার করা হয়ে থাকে। 

এর দ্বারা সামান্য খরচে, অল্প পরিশ্রমে আগাছা দমন করা যায়। 

বাজারে দুই ধরনের আগাছানাশক দেখা যায়৷ 


সিলেক্টিভ আগাছানাশক

এ জাতীয় আগাছানাশক নির্দিষ্ট ফসলি গাছের কোন ক্ষতি না করে কেবল অন্যান্য অবাঞ্ছিত আগাছাকে দমন করে ফেলে। যেমন- নিচে ধান গাছের জন্য "প্রেটিলাক্লোর"  গ্রুপের (রিফিট) এর ছবি দেয়া আছে।

রিফিট

এছাড়া পাট খেতের আগাছা দমনের জন্য নিচের ছবিতে "কুইজালোফপ-পি-ইথাইল" (টাইজালোসুপার) এবং "ইথক্সিসালফুরান" (মুনরাইজ) দেয়া আছে। 

মুনরাইজ,টাইজালোসুপার

পিঁয়াজ খেতের সকল আগাছা দমনের জন্য পেন্ডামেথালিন গ্রুপের ছত্রাকনাশক ব্যবহার করা হয়।

এগুলো ছাড়াও আরো বহু ধরনের আগাছানাশক বহুল পরিমাণে ব্যবহৃত হয়।

..... এক বিঘা জমির আগাছা পরিসষ্কারের জন্য আনুমানিক ১০ টি লেবার প্রয়োজন হয় যেখানে ৩,০০০ (৩ হাজার) টাকা খরচ হয়ে যেতে পারে। 

অথচ মাত্র ১০০ টাকার একটি "রিফিট" ব্যবহারে প্রায় সকল আগাছা দমন হয়ে যায়। তাই আগাছানাশকের ব্যবহার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। 


নন সিলেক্টিভ আগাছানাশক

এটি সাধারণত পরিত্যক্ত জমিতে বেশি ব্যবহার হয়। নিচের ছবিতে 

গ্লাইফোসেট গ্রুপের দুটি (সান আপ এবং জাহামা) আগাছা নাশকের ছবি দেয়া আছে। 

সানআপ

এছাড়াও প্যারাকোয়াট গ্রুপের আগাছানাশক খুব বেশি ব্যবহৃত হয়। এগুলো অনির্বাচিতভাবে সকল ধরনের আগাছাকে পুড়িয়ে বা গোড়া সহ পচিয়ে প্রায় নিঃশেষ করে দেয়। 


ইদুরনাশক (Rodenticide)

এটিও পেস্টিসাইডের আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। 

ইঁদুরকে কখনও হালকাভাবে নেয়া উচিত নয়, কারণ ইঁদুর আমাদের দেশের উৎপাদিত ধান-গমের ১০% খেয়ে নষ্ট করে। এছাড়াও বহু ধরনের ফসল এবং খাদ্য নষ্ট করে থাকে। 

প্রতি বছর বাংলাদেশে ইঁদুর ৫০-৫৪ লক্ষ মানুষের ১২ মাসের খাবারের সমপরিমান খাদ্য নষ্ট করে থাকে। 

এবং প্রতি বছর এশিয়ায় ১৮ কোটি মানুষের ১২ মাসের খাবার নষ্ট করে এই ইঁদুর। 

এই ইঁদুর দমন করা এতো সহজ কাজ নয়। এটি দমনের জন্য খুব শক্তিশালী বিষ প্রয়োগ করতে হয়। 

"জিংক ফসফাইড" প্রয়োগের মাধ্যমে ইঁদুর খাওয়ার সাথে সাথেই মারা যায়। এছাড়াও দির্ঘস্থায়ী বিষ প্রয়োগের মাধ্যমে বেশি পরিমান ইঁদুর দমন করা যায়। 

"সাইনোগ্যাস ফসটকসিন" ট্যাবলেট দিয়েও ইঁদুর দমন করা হয়। 

নিচের ছবিতে গ্যাস ট্যাবলেট আর লানিরেট হচ্ছে ইঁদুর দমনের জন্য দুটি  Rodenticide এর উদাহরণ। 


লানির‍্যাট,অ্যালুমিনিয়াম ফসফেড

কৃমিনাশক (Newmatiocide)

নেমাটোডা বা কৃমি খুব ছোট হওয়ায় চোখে দেখা না গেলেও এটি ফসলের মারাত্মক ক্ষতি করে থাকে। 

টমেটো, শিম, লাউ, পুঁইশাক সহ বহু ফসল চাষাবাদের সময় এদের শেকড়ে আক্রমণ করে, এতে শেকড় ফুলে গিটের সৃষ্টি হয়। শুরুতে ব্যবস্থা না নিলে শেকড় ফুলে এবড়ো-থেবড়ো হয়ে যায় এবং পরবর্তীতে তা পচনের মতোও হতে দেখা যায়। শেকড়ের কাজ করার ক্ষমতাকে ধীরে ধীরে নষ্ট করে ফেলে।

এর ফলে গাছের গ্রোথ কমে গিয়ে গাছ দুর্বল ও হলুদ বর্ণ ধারণ করে। ফলন মারাত্মকভাবে কমে যায়। 

নিচের চিত্রে যে সকল দানাদার বিষের ছবি দেয়া আছে- যেমন :- কার্বোফুরান, ফিপ্রনিন ইত্যাদি ব্যবহার করে সফলভাবে নেমাটোড নিয়ন্ত্রণ করা যায়। 


কার্বোফুরান, ফিপ্রেনিল

মাকড়নাশক ( Newmatiocide)

কৃষি ক্ষেত্রে সুধু কীট-পতঙ্গ নয়, মাইট বা মাকড়েরও আক্রমণ হয়। লাল মাকড়, হলুদ মাকড়, সাদা মাকড় ইত্যাদি। 

এরা অতি ক্ষুদ্র হওয়ায় খালি চোখে দেখা যায় না। কচি পাতার নিচে বসে পাতার রস চুষে গাছকে একেবারে দুর্বল করে দেয়। পাতা নিচের দিকে কুঁকড়ে যায়। এরা ভাইরাসের বাহক হিসেবেও কাজ করে। 

এদের দমন করার জন্যই মাকড়নাশক বা  Newmatiocide ব্যবহার করা হয়। 

চিত্রে "এবামেকটিন" গ্রুপের (লিকার ও ভারটিমেক) দুটি মাকড়নাশক এবং "সালফার" (থিয়োভিটকেও) মাকড়নাশক হিসেবে ব্যবহার করা হয়। 


থিয়োভিট,ভারটিমেক,লিকার

শৈবালনাশক (Algicide)

পৃথিবীতে প্রায় ৩০ হাজার প্রজাতির শৈবাল আছে৷ 

শৈবাল অনেক ক্ষেত্রে উপকারী হলেও অতি মাত্রায় বৃদ্ধি পেলে তা দমন করার প্রয়োজন হয়। শৈবালের কারণে পুকুরের পানি নোংরা হয়ে যায়।

পানি পরিষ্কার ও স্বচ্ছ রাখার জন্য শৈবাল দমন করতে হয়। 

অনেক সময় পুকুরের পানির উপর নীলাভ সবুজ শৈবালের আস্তরণ পড়ে, যাকে বলা হয় "#ওয়াটার_ব্লুম"। এর কারনে পুকুরের পানি দূষিত হয় এবং খাবার অনুপযুক্ত হয়। এতে পুকুরে বসবাসকারী মাছ ও অন্যান্য প্রাণী রোগাক্রান্ত হয়। বাতাসের অক্সিজেন পানিতে যেতে পারে না, এতে পুকুরের পানিতে অক্সিজেনের সংকট হয়ে মাছ ও অন্যান্য জলজ প্রাণী মারা যায়। 

তাই শৈবাল দমন করার জন্য  Algicide ব্যবহার করা হয়ে থাকে। 


শামুকনাশক (Limacides)

জলাশয়ে অতিরিক্ত শামুক বৃদ্ধি পেলে কদাচিৎ অক্সিজেনের স্বল্পতা হতে পারে। এতে মাছ ও অন্যান্য জলজ প্রাণী মারা যেতে পারে।  শামুকের কিছু প্রজাতি আছে, যারা শস্য ও বাগানের গাছের ক্ষতিসাধন করতে পারে। 

তাই শামুক দমন করার জন্য Limacide ব্যবহার করা হয়। 


এখানে শুধু বালাইনাশক আছে, তা নয়। 

চিত্রে আমরা " ফ্লোরা এবং লিটোসেন" দেখতে পাচ্ছি। এগুলো আসলে কোন ধরনের পোকা-মাকড় বা রোগ দমন করে না। সে কারনে একে বালাইনাশক বলতে পারি না। এগুলো আসলে উদ্ভিদের "গ্রোথ হরমন" (জৈব উদ্দীপক) বা PGR- Plant Growth Regulator.

এগুলো গাছে জৈব উদ্দীপনা সৃষ্টির মাধ্যমে গাছের বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করে। 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

অবাঞ্চিত মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকুন